প্রাক্তন জেনারেল, বর্তমান বিচারপতিÑ সামনে কী?
সামাজিক মাধ্যমে হঠাৎ করে মঈন ইউ আহমেদ ভেসে বেড়াচ্ছেন। সেই কারিগর যিনি ওয়ান ইলেভেনের নেপথ্য নায়ক। তাকে আমি চোখে দেখিনি তবে তার মিলিটারি বাঁশী শুনেছি। একটা কথা স্বীকার করি সেসময় মানে ওয়ান ইলেভেনের সময় দেশে গিয়ে দেখি মানুষ কেমন যেন স্বস্তিতে। তারা বলাবলি করছিল, খাম্বারাজ তারেকের জমানা শেষ হবার কারণে তারা নিরাপদ বোধ করছে। সাথে আওয়ামী লীগের ওপরও ছিল চরম হতাশা। সে সময় আমি বই মেলায় যাবার পরই বুঝেছিলাম, এরা টিকবে না। কারণ চারদিকে স্তুতি আর বন্দনার ছড়াছড়ি। বহু সময় ধরে দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকা এক যুবক এগিয়ে এসে আমাকে বলেছিল, দাদা আমাদের কাগজের জন্য একটা ইন্টারভিউ দেবেন? পাশে দাঁড়ানো আমার ছড়াকার বন্ধুটি আমাকে পারলে টেনে নিবে যায় আরেকদিকে। প্রথমে ঘটনা না জানলেও বুঝলাম বেচারা তখন সেনা সরকারের সাথে তাল মেলানো কথিত বিরোধী দলের গজিয়ে ওঠা নেতা ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর কাগজের সাংবাদিক। খুব ছোট করে তার সাথে আলাপচারিতা করলেও আমি নিশ্চিত ছিলাম এরা কেউই টিকবে না। কারণ এই কোরেশী ভাইকে আমি চিনি ছেলেবেলা থেকে। জাসদের নেতা মীরসরাই বা সে এলাকার এই মানুষটি অনেক আগেই সাহস ও নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছিলেন।
তার দলের মোটরবাইক ওয়ালারা বছর খানেক টু পাইস কামানোর পর হাওয়া। মঈন ইউ আহমেদ, ফখরুদ্দীন আহমেদও দেশ ছেড়ে চলে যান একসময়। পরে অষ্ট্রেলিয়ায় হাই কমিশনার হয়ে আসা আরেক জেনারেল মাসুদ উদ্দীন চৌধুরীর সাথে আমার অনেকবার অন্তরঙ্গ পরিবেশে কথা বলার সুযোগ ঘটেছিল। কিন্তু নানা বিষয়ে মত দিলেও মুখ খুলতে চাননি তিনি। তার বদ্ধমূল ধারণা মঈন ইউ আহমেদের কারণেই অভীষ্ট কাজে সফল হয়নি সেই সরকার। তাদের ভেতর দুই নেত্রীকে গ্রেপ্তার করা নিয়েও মতভেদ আছে। সবাই বলেন তারা এই কাজ করতে চাননি। যাই হোক আজ এতবছর পর কি কারণে প্রাক্তন জেনারেল শেখ হাসিনাকে প্রশংসা করছেন বা করে থাকলে সে খবর ফলাও হচ্ছে বুঝতে পারছি না। সেটিং সান বা অস্তমিত খালেদা জিয়াকে একসময় প্রচুর নিন্দা আর গালমন্দ করার কাজে অগ্রণী তথ্যমন্ত্রীও বোঝে নিয়েছেন বিএনপি আপাতত মরা সাপ। তাই তার মুখ বন্ধ। তবে কি কারণে হঠাৎ এই প্রচারের ঢল?
আরেকদিকে আরেক বিষয়ে গুজব চলছে সমানে। আমরা পছন্দ করি বা না করি প্রধান বিচারপতি তর্ক বিতর্কের তুঙ্গে। যেটুকু বোঝা যায় প্রধান বিচারপতি একজন সোজা-সাপটা কথা বলার মানুষ। তিনি ছুটিতে যেতেই পারেন। কিন্তু সে ছুটি নিয়েও শুরু হয়ে গেছে নানা ধরণের গুজব। শুধু প্রিন্ট মিডিয়া না ভিডিও পাঠিয়ে দেখানো হচ্ছে তিনি নাকি জবরদস্তির মুখে ছুটিতে যেতে বাধ্য হয়েছেন। কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা আমরা জানি না। এখন এমন এক কাল সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের বিষয়টাও আগের মতো সহজ না। সত্যকে অনায়াসে মিথ্যা বলে চালানো যায় আর মিথ্যা হয়ে যায় সত্যি। ফলে কোনো মন্তব্য করাই অনুচিত। কিন্তু বিষয় তো গুরুতর। এর সাথে আর যেসব গুজব বাতাসে উড়ছে তার একটা সত্য হলেও আমরা আবার দশ বছরের জন্য পেছনে ফিরে যাব। সেটা যদি না চাইত আশা করব গুজব গুজবই থাকবে। সে ভয় সে আশঙ্কা কে ঘণীভূত করার কারণগুলো স্পষ্ট হচ্ছে কোন দুঃখে? এতদিন পর আবার মঈন ইউ আহমেদের কথা কেন? কেন তার বক্তব্য প্রচার হচ্ছে সোস্যাল ভাইরাল হিসেবে? তিনি না ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে অর্থের যোগান দিতে পারছিলেন না? এমন দুরারোগ্য ব্যধি থেকে হঠাৎ কোন যাদুবলে উঠে দাঁড়ালেন? তাদের সবার উৎস যদি একটা হয় আর সে উৎস যদি ফের জাগতে শুরু করে তবে মানতেই হবে দেশের ভবিষ্যত ভিন্নমুখি। ভালো না মন্দ সে বিচারের সময় বা ভার আমাদের এখনো আসেনি। কিন্তু দুর্ভাবনার জায়গাটা বেশ বড় হচ্ছে। দু’দুটো উৎসব নিরাপদে পার করা বাঙালির সামনে আসলে এখন কী আছে? সেটাই দেখার বিষয়।
লেখক: লেখক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান