চীন-পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের নৌ-যুদ্ধের প্রস্তুতি
পাকিস্তানে চীনের পারমানবিক শক্তি চালিত সাবমেরিনের ঘন ঘন উপস্থিতি ভারতকে ভাবিয়ে তুলছে। যে কারণে ভারত একাধিক দেশের সহযোগিতায় তার নৌবাহিনীকে একটি শক্তিশালী নৌবাহিনীতে পরিণত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত এক বছর আগে রাশিয়া থেকে একটি বিমানবাহী রণতরী সংগ্রহ করেছে। এর নামকরণ করা হয়েছে বিক্রমাদিত্য। এই বিমানবাহী জাহাজ ২৪টি মিগ-২৯ জঙ্গি বিমান ও ১২টি সাবমেরিন বিধ্বংসী হেলিকপ্টার বহন করে। আগামী দুই বছরের মধ্যে ভারতের সব ফ্রিগেট ও ডেসট্রয়ারে ইসরাইলের তৈরি বারাক-৮ মিসাইল বসানো হবে। প্রতিটি বারাক মিসাইল-৮ শত্রু পক্ষের যে কোন জাহাজ ধ্বংস করতে সক্ষম। একই সাথে ভারত আরেকটি পারমানবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন চালু করতে যাচ্ছে। এটির নাম করণ করা হয়েছে কালভানি। এছাড়া আরেকটি পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন ভারতের নৌবাহিনীতে রয়েছে। যেটির নাম ওরিহান্ট। এই দুইটি পারমানবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন গুলো দিনে কিংবা রাত্রে শত্রু পক্ষের রাডারের চোখ ফাকি দিয়ে মিসাইল ও টরপেডোর দ্বারা হামলা চালাতে সক্ষম। এই দুইটি সাবমেরিন ব্রহ্মজ-২ ক্রুজ মিসাইল বহন সক্ষম। প্রয়োজনে এই সাবমেরিনগুলো তার মিসাইলে পরমাণু বোমা বহন করতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় ভারত বিশাল নামে একটি বিমানবাহী জাহাজ নির্মাণ করছে। এই বিমানবাহী জাহাজ ফ্রান্সের তৈরি র্যাফেল জঙ্গি বিমান বহন করবে। নতুন এক চুক্তির আওতায় ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ভারত মহাসাগরে টহল দিতে সক্ষম ২২টি গার্ডিনার চালক বিহীন গোয়েন্দা বিমান সংগ্রহ করবে। এই চালক বিহীন গোয়েন্দা বিমান শত্রু পক্ষের সব ধরনের জাহাজ ধ্বংস করতে সক্ষম মিসাইল বসানো হবে। জাপানের সাথে এক চুক্তির আওতায় ভারত ২০টি উভচর বিমান সংগ্রহ করবে। এর ফলে ভারত মহাসাগরে ভারতের কর্তৃত্ব অনেকটাই বেড়ে যাবে। চীনকে দমন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন থেকে চীনের প্রতিবেশী দেশগুলোকে সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে আসছে। এর ফলে চীনের দুশ্চিন্তা বেড়েই যাচ্ছে। চীন তার নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত করেছে। যার ফলে একাধিক দেশের সাথে যুদ্ধ করা ও সেই যুদ্ধে জয় লাভ করার মত দক্ষতা চীন অর্জন করে ফেলেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতের নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে শক্তিশালী করছে। ভারতের নৌ বাহিনীতে ১৩টি ডিজেল-ইলেক্ট্রনিক আক্রমনকারী সাবমেরিন রয়েছে। কিন্তু এগুলো অত্যান্ত পুরাতন হওয়ার ফলে কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যে কারণে ভারত ফ্রান্সের সহযোগিতায় ৬টি সাবমেরিন নির্মান করছে। এর মধ্যে ২টি নৌবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে। কিন্তু চীনের সাবমেরিনগুলো অনেক কার্যকর ও আক্রমণ করতে সক্ষম হওয়ার ফলে ভারতের যুদ্ধ জাহাজের পক্ষে চীনকে মোকাবেলা সম্ভব না। যেকারণে ভারত একাধিক দেশের সহযোগিতায় নিজের নৌবাহিনীকে উন্নত করছে। চীন ভারতকে চাপে রাখার জন্য পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করছে। এর ফলে ভারতের দুশ্চিন্তা অনেকটাই বেড়ে গেছে। আর ভারতের এই দুশ্চিন্তা লাঘব করার জন্য একাধিক দেশ ভারতের পাশে এসে দাড়িয়েছে। চীন ভারতের উপকূলের কাছাকাছি তার আক্রমণকারী সাবমেরিনকে বার বার পাঠাচ্ছে এমনকি আন্দামান দ্বীপ পর্যন্ত চীনের সাবমেরিন পৌঁছে যায়। যার ফলে ভারতের পক্ষে তার পুরাতন সাবমেরিন দ্বারা চীনের অত্যাধুনিক সাবমেরিনকে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। রাশিয়ার সেরা সাবমেরিন এর প্রযুক্তি চীনের কাছে বিক্রি করছে। চীনের সাবমেরিনগুলো কোনো শব্দ ছাড়া রাডারের চোখ ফাকি দিয়ে যেকোন সময় ভারতের জলসীমায় প্রবেশ করতে সক্ষম। অপর দিকে ভারতের সাবমেরিনের উপস্থিতি চীনের রাডারে ধরা পরে যায়। উপমহাদেশে আগামীতে যদি সীমিত পর্যায়ে নৌ-যুদ্ধ হয় তাহলে, চীন বনাম ভিয়েতনাম, চীন বনাম জাপান ও চীন এর সাথে ভারতের নৌযুদ্ধের সম্ভবনাটাই বেশি। যারা নিজেদের নৌবাহিনীকে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র দিয়ে গড়ে তুলতে পারবে নৌযুদ্ধে জয় তাদেরই হবে। শর্ত হচ্ছে, নৌবাহিনীতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির যুদ্ধ জাহাজ, সাবমেরিন, বিমানবাহী রণতরী, হেলিকপ্টার বাহী রণতরী, জাহাজ বিধবংসী মিসাইল থাকতে হবে। তা না হলে নৌযুদ্ধে সাফল্য পাওয়া অনেকটাই কঠিন হয়ে দাড়াবে যেকোন দেশের।
লেখক: কলামিস্ট/সম্পাদনা: আশিক রহমান