প্রতিবেশির প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
মুহিব্বুল্লাহ্ বিন শহীদ
আমাদের চারপাশ ঘিরে রয়েছে প্রতিবেশীর বসবাস। ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে উঠানে বেরোলেই তাদের দেখা হয়, কুশল বিনিময় হয়। সামাজিক জীবনের সমস্যাগুলো মিলিত ভাবে মোকাবেলা করা, অসুখের দিনে প্রতিবেশীর ঘর থেকে খাবার আসা, এক সঙ্গে অনেক পরিবার মিলে ছুটি কাটাতে বেরিয়ে পড়া, বিকেলে মা-চাচিদের কুশল বিনিময়, পান খাওয়া, সামনে বাচ্চাদের খেলাধুলা, দূরন্তপনা এগুলো আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ, প্রতিবেশী লোকদের সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতার প্রতিফল। বিপদ-আপদ, দুঃখ-দুর্দশায় প্রতিবেশীরাই প্রথমে আমাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। বিয়ে শাদি ও অনুরূপ সামাজিক কাজকর্মে প্রতিবেশীর ভূমিকা থাকে উল্লেখযোগ্য।
তাই ইসলাম যেমনিভাবে পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছে তদ্রƒপ প্রতিবেশীর সঙ্গেও সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকটবর্তী প্রতিবেশী ও দূরবর্তী প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সহচর, পথিক ও দাস-দাসীর সাথে সদয় ব্যবহার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অহংকারী-দাম্ভিককে পছন্দ করেন না (সুরা নিসা, আয়াত : ৩৬)
রাসূল (সা.) সুস্পষ্ট ঘোষণা করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করে’।অন্য একটি হাদিসে তিনি বলেন, ‘তুমি তোমার প্রতিবেশীর সাথে উত্তম ব্যবহার কর, তাহলে তুমি মুমিন হতে পারবে। (তিরমিযী শরীফ)
মূলত আমাদের চারপাশে অন্য যে সব পরিবার বাস করে তাদেরকেই আমরা প্রতিবেশী বলি। সেই প্রতিবেশী মুসলমান, কাফের,পূণ্যবান, পাপী, বন্ধু, শত্রু, দানশীল, কৃপণ, উপকারী, অনিষ্টকারী, আত্মীয়, অনাত্মীয়,দেশী, বিদেশী যে কেউ হতে পারে।
প্রতিবেশীর সাথে মিলেমিশে থাকা, তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করা, প্রত্যেক মুসলমানের নৈতিক দায়িত্ব। প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া ঈমানের পরিপন্থী কাজ।রাসুল (সা.) বলেন যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। ( সহীহ বুখারী শরীফ)
আমাদের দায়িত্ব হলো প্রতিবেশীর সুবিধা অসুবিধায় সৌহার্দ্য ভাব বজায় রাখা। প্রতিবেশী সমস্যায় পড়লে করযে হাসানা দেওয়া। দুঃখ দুর্দশায় প্রতিবেশীর প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা। এক হাদিসে রাসুল (সা.)বলেন, এক প্রতিবেশী যেন অপর প্রতিবেশীকে দেয়ালের সাথে খুঁটি গাড়তে নিষেধ না করে। (সহীহ বুখারী)
দরিদ্র প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নেওয়াও আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা. )বলেন, ঐ ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন নয়, যে পেট পুরে খায় আর তার পাশেই তার প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে। (মিশকাত শরীফ, হাদীস নং – ৪৯৯১)
নিজের জন্য যা পছন্দনীয় তা প্রতিবেশীর জন্যও পছন্দ করা আমাদের দায়িত্ব। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহর শপথ! তোমাদের মধ্যে কেউ পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে তা তার ভাইয়ের জন্যও পছন্দ না করবে। (সহীহ মুসলিম)
মুসলমানের ছয়টি হকের অন্যতম হচ্ছে দাওয়াত কবুল করা। প্রতিবেশীর দাওয়াত কবুল করাও রাসুল (সা.)এর নির্দেশ। জরুরি হলো নির্দেশ পালনের জন্য তাদের দাওয়াত কে কবুল করা। তাদের মন তুষ্টি করা আমাদের দায়িত্ব। রাসুল (সা.)বলেন যখন তোমাদের কাউকে খাবারের জন্য দাওয়াত দেয়া হয়, সে যেন তার দাওয়াত কবুল করে। অতঃপর ইচ্ছা হলে সে খাবে আর না হলে ছেড়ে দিবে।(সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীস নং – ১৪৩০, মিশকাত শরীফ হাদীস নং – ৩২১৭)
প্রতিবেশী কেউ মারা গেলে তার পরিবার-পরিজনের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা, সময় সুযোগ হলে তাদের ঘরে হাদিয়া পাঠানো, ও প্রতিবেশীর জানাযায় অংশগ্রহণ করাও ইসলাম প্রতিবেশীর হক ও আমাদের দায়িত্ব বলে বিবেচনা করেছে ।
মুতার যুদ্ধে জাফর (রা. ) শহীদ হলে রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবীদেরকে বলেন, তোমরা জাফরের পরিবারের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা কর। কেননা আজ তাদের উপর এমন মসিবত নেমে এসেছে, যা তাদেরকে ব্যস্ত রেখেছে। (ইবনে মাজাহ)
বাড়ীতে ভাল কোন খাদ্য বা তরকারী পাক হলে তাতে প্রতিবেশীকে শরীক করা আমাদের কর্তব্য। এব্যাপারে রাসূল (সা. )-এর নির্দেশ হলো, আবু যার (রা.) থেকে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আবু যার! যখন তুমি তরকারি রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমাণ বেশি কর। অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর বাড়িতে কিছুটা পৌঁছে দাও