শরণার্থীদের সেবা ইসলামের অনুপম আদর্শ
জাকারিয়া হারুন
মিয়ানমার সেনাবাহিনী বীভৎসভাবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের মারছে। তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করছে। ভয়াবহ নির্যাতন থেকে জীবন বাঁচাতে তারা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। ২৫ আগস্টের পর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তাদের মধ্যে নারী এবং শিশুর সংখ্যাই বেশি। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সেখানে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ এবং গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়াকে জাতিগত নিধন হিসেবে উল্লেখ করেছে। তারপরও সহিংসতা সমানহারে চলছে। ইসলামে শরণার্থীর সেবা করার গুরুত্ব অপরিসীম। জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে শরণার্থী সেবকদের। আর তাদের সেবা না করাকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের কীসে দোজখে নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা মুসল্লিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না, আমরা অভাবগ্রস্তকে আহার দান করতাম না।’ (আল কোরআন : ৭৪ : ৪২-৪৪)
মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘তুমি কি দেখেছ তাকে, যে দ্বীনকে অস্বীকার করে? সে তো সেই, যে এতিমকে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয় এবং সে অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদানে উৎসাহ দেয় না।’ (আল কোরআন : ১০৭ : ০১-০৩)
পবিত্র এ আয়াতে অসহায়, এতিম, মিসকিনদের সাহায্য-সহযোগিতা না করা, এসব বিপন্ন মানুষের সাহায্যে এগিয়ে না যাওয়া এবং এদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা তাদের বৈশিষ্ট্য ও স্বভাব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা প্রকৃত অর্থে দ্বীন-ধর্ম ও পরকালে অবিশ্বাসী। সুতরাং যারা মুমিন হবে, তাদের অবশ্যই বিপদগ্রস্ত ও অসহায়, শরণার্থীদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ থেকে কোনো কষ্ট দূর করবে কিয়ামতের কষ্টসমূহ থেকে আল্লাহ তার একটি কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়াতে ছাড় দেবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে তাকে ছাড় দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সাহায্যে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে যায়।’ [মুসলিম : ৭০২৮; আবূ দাঊদ : ৪৯৪৮; তিরমিযী : ১৪২৫]
অসহায় শরণার্থীদের সেবা ইসলামের অতি আগ্রহ এবং অনন্ত প্রেরণার স্বাক্ষর হিসেবে আর কিছু নয় ; কেবল নিম্নোক্ত হাদীসে কুদসীই যথেষ্ট হতে পারে। হযরত আবূ হুরায়রা রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কেয়ামত দিবসে নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রূষা করো নি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক। আপনিতো বিশ্বপালনকর্তা কিভাবে আমি আপনার শুশ্রূষা করব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাও নি। তুমি কি জান না, যদি তুমি তার শুশ্রূষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে।?’
‘হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাও নি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব, তুমি হলে বিশ্ব পালনকর্তা, তোমাকে আমি কীভাবে আহার করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জান না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাদ্য দাও নি। তুমি কি জান না যে, তুমি যদি তাকে আহার করাতে তবে আজ তা প্রাপ্ত হতে?’
‘হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাও নি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রভু, তুমি তো রাব্বুল আলামীন তোমাকে আমি কীভাবে পান করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাকে তুমি পান করাও নি। তাকে যদি পান করাতে তবে নিশ্চই আজ তা প্রাপ্ত হতে।’ (সহীহ মুসলিম : ৬৭২১; সহীহ ইবন হিব্বান : ৭৩৬) লেখক : তরুণ আলেম, সাংবাদিক।