মৃত ব্যক্তির আত্মা কি বিভিন্ন রূপ ধারণ করে?
মুফতি মাহমুদ হাসান
মৃত্যুর পর কোনো মানুষ পুনরায় দুনিয়ায় আগমন করে না। এটা সম্ভবও নয়। মৃত্যুর পর পুনর্জন্ম ও জন্মান্তরের বিশ্বাস হিন্দু ও বৌদ্ধদের বিশ্বাস। তাদের ধারণামতে, মানুষ পৃথিবীতে সৎ কর্মশীল হলে মৃত্যুর পর তারা সৎ মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে পুনর্জন্ম লাভ করে ফিরে আসে। আর অসৎ মানুষ কুকুর, বিড়াল, শূকর ইত্যাদি বিভিন্ন পশু ও কীটপতঙ্গের সুরতে পুনর্জন্ম লাভ করে। কারো কারো মতে, অসৎ মানুষ পৃথিবীতে অন্ধ, বধির, খোঁড়া হিসেবে পুনর্জন্ম লাভ করে। এসব তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ। এসব বিশ্বাস যে অযৌক্তিক ও অবাস্তব, তা দলিল-প্রমাণে সাব্যস্ত করার প্রয়োজন নেই। কোনো মুসলমান এ ধরনের অলীক ও কল্পনাপ্রসূত বিশ্বাস রাখতে পারে না। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী কোনো মানুষ মৃত্যুর পর পুনর্জন্ম লাভ করে পুনরায় দুনিয়ায় আগমন করতে পারে না। কেননা মৃত্যুর পর ইমানদার সৎকর্মশীল মানুষের রুহ ‘ইল্লিয়্যিন’ নামক জায়গায় অবস্থান করে বলে কোরআনে কারিমে রয়েছে।
তাতে তারা কিয়ামত পর্যন্ত পরম শান্তিতে অবস্থান করবে। হাশরের দিন বিচারকার্য শেষে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। আর অবিশ্বাসী ও পাপী লোকদের রুহ ‘সিজ্জিন’ নামক জায়গায় অবস্থান করে। এটি একটি বন্দিখানা, এতে তারা হাশরের মাঠে বিচারকার্য শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত অশান্তি ভোগ করতে থাকবে। বিচারকার্য শেষে তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (দেখুন : সুরা মুতাফিফফীন : ৭-১৮)
এরূপ কোনো কোনো হাদিসমতে শহীদদের রুহ সবুজ পাখির সুরতে আল্লাহর আরশের নিচে উড়তে থাকবে। ছোট শিশুদের রুহও মৃত্যুর পর ঊর্ধ্বাকাশের কোনো আনন্দময় জায়গায় বিচরণ করবে। হাশরের দিবসে সবার দুনিয়াবি শরীরের সঙ্গে রুহ একত্রিত হয়ে পুনরুত্থিত হবে।
মৃত্যুর পর কেউ ফিরে আসবে না : তবে পৃথিবীতে পুনর্জন্ম, জন্মান্তর ও এ ধরনের কল্পনাপ্রসূত কোনো বিশ্বাস ইসলাম সমর্থন করে না। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমাজে কিছু অবাস্তব ও অলীক কথা প্রচলিত রয়েছে, যার সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন অনেকে বলে থাকে, মৃত্যুর পর প্রতি সোমবার তারা দুনিয়াবি ঘরে আসে। কেউ কেউ বলে, এক মাস পর্যন্ত তার রুহ ঘরের চারপাশে বিভিন্ন প্রাণীর ছবি ধরে এসে ঘোরাফেরা করে এবং তার আত্মীয়স্বজনদের দেখে। কেউ কেউ বলে, জুমা, ঈদ, শবেবরাত ও শবেকদরে তার ঘরের দরজায় ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে আসে। কোথাও প্রচলিত আছে যে খারাপ মানুষের রুহ পৃথিবীতে এসে মানুষদের জিনের ন্যায় আসর করে। আসলে এসব অলীক ধারণা উপমহাদেশের মুসলিম সমাজে হিন্দুদের সং¯্রবে থাকার কারণে ছড়িয়েছে। এসবের সঙ্গে ইসলামের নূন্যতম কোনো সম্পর্ক নেই। অনেকে এসব ব্যাপারে কিছু হাদিসও পেশ করে থাকেন, যা আলেমদের মতে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া, ১/৬০৭)
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু আসে, সে বলে, হে আমার রব, আমাকে ফেরত পাঠান, যেন আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম। কখনো নয়, এটি একটি বাক্য যা সে বলবে। যেদিন তাদের পুনরুত্থিত করা হবে সেদিন পর্যন্ত তাদের সামনে থাকবে বরজখ। অতঃপর যেদিন শিঙায় ফুঁক দেওয়া হবে, সেদিন তাদের মধ্যে কোনো আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না, কেউ কারো বিষয়ে জানতে চাইবে না। অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে সফলকাম। আর যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজদের ক্ষতি করল, জাহান্নামে তারা হবে স্থায়ী। (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৯৯-১০৩)
ওই আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে কোনো মানুষের পক্ষে মৃত্যুর পর পুনরায় দুনিয়াতে আগমন সম্ভব নয়। এ ছাড়া কোরআন-হাদিসের অসংখ্য বর্ণনায় তা-ই প্রমাণিত, সে অনুসারে মৃত্যুর পর কেবল বরজখ, হাশর ও জান্নাত-জাহান্নাম। পেছনে আসার কোনো সুযোগ নেই। মৃত ব্যক্তি নিজ শরীরেই পুনরুত্থিত হবে : মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, মানুষ কি মনে করে যে আমি কখনোই তার অস্থিসমূহ একত্র করব না? হ্যাঁ, আমি তার আঙুলের অগ্রভাগগুলোও পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম। (সুরা : কিয়ামাহ, আয়াত : ৩-৪)
সবাই আল্লাহর কাছেই প্রত্যাবর্তিত হবে : অন্য এক আয়াতে রয়েছে, প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, তারপর আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৫৭) লেখক : ফতোয়া গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার