চলচ্চিত্রের সংকট এবং শিল্পীদের দায়
আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক )
আমাদের চলচ্চিত্রে মৌলিক গল্পের অভাব ও শিল্পী সংকট। এর থেকেও বড় অভাব প্রজেক্টর মেশিন এবং সিনেমা হলের পরিবেশ। সংকট আরও অনেক কিছু আছে। যৌথ প্রযোজনার নামে একটি গ্রুপ চলচ্চিত্রের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। এগুলোই হলো চলচ্চিত্র সমস্যার মূল। এই সমস্যার সমাধানে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। যৌথ প্রযোজনার ছবি ইদানিংকালে দেখি না। যেগুলো দেখি সেগুলো হলো ভিনদেশের লোকাল প্রডাকশন। এগুলোকে মিথ্যা বলা যেতে পারে, একধরনের চুরি বলা যেতে পারে। চুরি করে একটা ছবি এনে সেখানে একটা নাম লিখিয়ে দিলাম, আমার উপরে হাত আছে। তাদের দ্বারা এটাকে যৌথ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এর আগে ওনারা যেটা দেখিয়েছেন বিরাট অঙ্কের পয়সা তারা পেয়েছেন। যৌথ প্রযোজনার ছবি হলে অসুবিধা নেই। যৌথ প্রযোজনার ছবি যত হবে ততই মনে করি ভাল। অবশ্যই সেটা শিক্ষণীয় হতে হবে। শুধু পয়সা উপার্জনের জন্য ছবি বানানো নয়। একজন মাত্র আর্টিস্ট নিয়ে যৌথ ছবি বলা হচ্ছে। সেটার জন্য তো পরিবার অনেক কষ্ট করল। আমার পরিবারের যে সদস্য আছেন তারা ব্যক্তিগত কোনো জিনিস করেননি। এই ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রি। এই ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রিকে ধ্বংস করার জন্য যে গ্রুপটি আছে, যাকে যৌথ প্রতারণা বলে থাকি আমরা। আসলে যৌথ প্রযোজনার যে নিয়ম, সে নিয়ম মানা হয় না। নিয়ম না মেনে ভিনদেশ থেকে ছবি আনা হয়। কলকাতা হলে সুবিধা হলো, আমরা একই ভাষায় কথা বলি। আমরা না করব কেন? আমার পরিবার না করবে কেন? পরিবার চাইবে ভালো কিছু।
দর্শক হিসেবে মিডল ক্লাস ফ্যামিলির মা-বোন যারা আসতেন, ছবি দেখতেন, তাদের হল থেকে বের করে দেওয়া হলো। কারা এটা করেছেন, যারা আজকে নানানভাবে লাফালাফি করছেন, তারাই তো করেছেন। ছবির বহু অংশ ইচ্ছে করলে দেখানো যায়। কিভাবে এই ছবির পৃথিবী থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই যে সাধারণ ঘরের মানুষ, তাদের বিনোদন বলতে বাংলা ছবি ছিল। এই বিনোদনকে কেমন করে যে ধ্বংস করছে, কল্পনাও করা যায় না। এই জায়গায় শুধু আমাদের চেষ্টা করে লাভ নেই, সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে।
মিথ্যা দিয়ে তো আর ছবি আনতে পারবে না, তাই চলচ্চিত্রে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। কিছু সংখ্যক শিল্পী আছেন, তাদের আচরণ শিল্পী সুলভ নয়। এই সমস্ত কিছুর মূলে হলো শিল্পী সমিতির ইলেকশন। এই যে অস্থিরতা, মানে হেরে যেতে পারব না। আমাকে হারাতে পারবেন না, আমাকে জিততেই হবে। আমি জানি না, আর্ট কালচারের লোক এভাবে কথা বলেন কিভাবে? আমার নিজের চোখে দেখা একটা ইলেকশন, সেখানে একজন বলছেন, ‘ফারুক ভাই, অবাক হয়ে যাই এটা কী ধরনের ইলেকশন হলো?’ কারণ, নির্বাচনের ধরনটা তাদের কেউ পছন্দ করেনি। সে আগেও ছিল সংগঠনে। সে দুইশ ভোটের ব্যবধানে ফেল করে। এরপর লাফালাফি। চলচ্চিত্রের সুসময় ফিরিয়ের আনার জন্য প্রয়োজন ভালো ভালো ছবি নির্মাণ করা। দর্শকদের আবার ‘হল’-এ আনার চেষ্টা করা। হলের সুবিধা দেখা। মেশিনের জন্য চেষ্টা চালানো। ভালো গল্প দিয়ে যদি ছবি বানানো যায় চলচ্চিত্রের স্বর্ণালী দিন আবারও ফিরে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।
পরিচিতি: চলচ্চিত্র অভিনেতা
মতামত গ্রহণ: সানিম আহমেদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ