রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ, আবার মিয়ানমার সরকার চুক্তি করে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়া, এই ঘটনা তো নতুন কিছু নয়। এই একই ঘটনা আগেও আরও দুই তিনবার ঘটেছে। এর আগে যে সকল রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া হয়েছিল, গত দুই তিনবারে তারা আবার মিয়ানমার থেকে উৎখাত হয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে। যাদের ফেরত নেওয়া হয়েছিল, তারাও প্রায় সবাই আবার চলে এসেছে। অতএব, যাওয়া আসার যে খেলা, নিয়ে যাওয়ার যে খেলা, এই বিষয়ে খুব বেশি আস্থা রাখা ঠিক হবে না। বরং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ অধিবেশনে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছিলেন, তার মধ্যে প্রথম দফাটি উল্লেখ্য যে, স্থায়ীভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। অর্থ্যাৎ সকল রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিয়ে যেতে হবে, তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে যে সমস্যা, তাদের অর্থনৈতিক সংকট সংক্রান্ত যে সমস্যা এবং তাদের মুভমেন্ট করা নিয়ে যে সমস্যা মিয়ানমার সেনাবহিনী দ্বারা এগুলোর সমাধান করতে হবে। এই সমস্যাগুলো যদি স্থায়ীভাবে সমধান না করা হয় অর্থাৎ রোহিঙ্গারা যদি বাংলাদেশে আসতেই থাকে অথবা আন্তর্জাতিক চাপের কারণে মিয়ানমার কিছু রোহিঙ্গাকে নিয়ে গেল অথবা সবাইকে নিয়ে গেল তাতেও এই সমস্যা সমাধান হবে না। তারা আবার বাংলাদেশে চলে আসবে। যেহেতু তাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নেই, তারা অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত এক কথায় তারা জাতিগতভাবে অবহেলিত। ওখানে কোনো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক কোনো উন্নয়নের ব্যবস্থা নেই। এগুলো সমাধান না করলে, যা হওয়ার তাই হবে। তারা আবার যেকোনো একটা ইস্যুতে দল বেধে বাংলাদেশে চলে আসবে। তাদের জন্য জাতিসংঘে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা বলয় বা সেফ জোন প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে তাদের স্থায়ীভাবে সেখানে বসবাসের ব্যবস্থা করতে হবে এবং যাতে তারা আর কোনোদিন শরনার্থী হয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের তালিকা প্রণয়নের কাজটা আরও দ্রুতভাবে করতে হবে। একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে। এই তালিকা প্রণয়নের সময় কেবল বাংলাদেশ সরকার এককভাবে না করে, জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক হাই কমিশনের উপস্থিতিতে, তাদের সম্পৃক্ততা রেখেই তালিকাটা করতে হবে। এই তালিকা প্রণয়নে যেন একটা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি থাকে, বিশেষ করে জাতিসংঘের স্বীকৃতি থাকে, তাহলে মিয়ানমার আর সংখ্যা নিয়ে কোনো তাল-বাহানা করতে পারবে না। বলতে পারবে না যে, এরা মিয়ানমারের নাগরিক নয়, এরা বাংলাদেশের নাগরিক, এদের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এদের বাড়ি-ঘর জালিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা প্রাণ বাঁচাতে চলে এসেছে। তাহলে তারা কাগজপত্র কিভাবে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে? তারা কিভাবে এগুলো নিয়ে আসবে? মিয়ানমার যাতে এ ধরনের কোনো কথা বলতে না পারে সে জন্য এই তালিকা প্রণয়ন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা পর্যায়ে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে এই পদ্ধতির মাধ্যমে মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। কারণ, সমস্যাটা বাংলাদেশের কোনো সমস্যা নয়, এটা মিয়ানমারের সৃষ্ট সমস্যা এবং মিয়ানমারকেই এ সমস্যার সমধান করতে হবে।
পরিচিতি: উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি
সম্পাদনা: আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ