তাবলিগ জামায়াত বেশে জঙ্গিদের আনাগোনা; উখিয়ায় অপরাধী চক্র সক্রিয়
বিপ্লব বিশ্বাস : উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্দেহভাজন লোকদের আনাগোনা বেড়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে শরনার্থী ক্যাম্পকে ইস্যু করে এখানে আইএসপন্থী নব্য জেএমবির, আরএসও, আল ইয়াকিনের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে বিপুল রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশে এ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করছেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিটির নেতাকর্মীরা।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা ইতোমধ্যে নব্য জেএমবির বেশ কিছু সদস্য থাকার সন্দেহ প্রকাশ করছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন বলছেন, অল্প সময়ের মধ্যে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা এ দেশে ঢুকেছে। তাদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঢুকানো সম্ভব হয়নি। তাছাড়া কে কোথায় আশ্রয় নিয়েছে বা ত্রাণসামগ্রী বিতরণের আড়ালে কী করা হচ্ছে তাও নজরদারির বাইরে থেকে গেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ব্যাপারে যে একেবারে মনোযোগহীন, তা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু সন্দেহভাজন লোকজনকে আটক করা ঘটনা ঘটেছে। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, চলমান রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত তাবলিগ জামায়াত বা অন্য কোনো নামে লোকজন এসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সাহায্যের পাশাপাশি রাতে ক্যাম্প এলাকায় অবস্থান করছে। ফলে সন্দেহভাজন লোকজনের আনাগোনা বেড়ে গেছে। ক্যাম্প এলাকায় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিকেল ৫টার মধ্যে বহিরাগত লোকজনকে ক্যাম্প এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য মাইকিং করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
থানা সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার রাতে ক্যাম্পে সন্দেহজনক ঘুরাফেরার করার সময় পুলিশ ৫ জন তাবলিগ জামায়াত বেশি লোককে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের পর ভবিষ্যতে ক্যাম্পে না আসার মুছলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের একটি দল গত সেপ্টেম্বরে উখিয়া টেকনাফ রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের তথ্য সংগ্রহ ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। ওই দলের একজন সদস্য স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, এখানে আইএসপন্থী নব্য জেএমবির দুই শ থেকে আড়াই শ সদস্য রয়েছে। তা ছাড়া আরএসও, আল ইয়াকিনের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো রোহিঙ্গা ইস্যুকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গা নেতা ডা. জাফর আলম বলেন, বালুখালী ক্যাম্পে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তি ত্রাণসামগ্রী বিতরণের আড়ালে সন্দেহজনক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তাদের নাম-পরিচয় সংগ্রহ করা কঠিন।
কুতুপালং বস্তির সভাপতি আবু ছিদ্দিক বলেন, তাদের কথামতো না চললে আল ইয়াকিনের সশস্ত্র একটি গ্রুপ রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে থাকে। তিনি জানান, গত ১৭ জুন রাত ১২টায় বস্তিতে হামলা চালিয়ে আয়ুব মাঝি (৪৫) ও সেলিম (২৫) নামের দুজন রোহিঙ্গাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরদিন মধুর ছড়ার জঙ্গল থেকে তাদের জবাই করা লাশ উদ্ধার করে উখিয়া থানা পুলিশ। ওই রোহিঙ্গা নেতা আরো জানান, আল ইয়াকিনের সদস্যরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।