পাহাড় কেটে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ক্যাম্প, পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা
দেশে বনাঞ্চল ও পাহাড় কাটা নতুন কিছু নয়, এটা তো পুরোনো ব্যাপার। যা দেশের পরিবেশের বিপর্যয়ে অন্যতম কারণও বটে। তবে এখন প্রশ্ন, কোন স্ক্যালে আপনি পাহাড় কাটবেন সেটা হচ্ছে ইস্যু। এটা কি বিশাল এলাকাজুুড়ে বনাঞ্চল ধ্বংস বা পাহাড় কেটে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছেন, নাকি নির্দিষ্ট কোনো একটা জায়গার মধ্য থেকে তাদের আশ্রয় দিচ্ছেন? রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের স্ক্যালটা কতটুকু এটাই হলো দেখার বিষয়। অতিবৃষ্টি ও অন্যান্য কারণে পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি ধসের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। এই পাহাড় ধসের ঘটনা একটি বা দুটি জায়গায় হচ্ছে না, এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ঘটেছে। আমি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেছি।
সেখানে সব পাহাড়ের গঠন অবস্থা একরকম নয়। যে সমস্ত পাহাড়ে মাটির ধরন বেলে বা বেলে-দোআঁশ টাইপের, সে সমস্ত এলাকায় পাহাড় ধসের পরিমাণটা একটু বেশি। বিশেষ করে যে সমস্ত এলাকায় পাহাড় কেটে মানুষ বসবাস বা বসতি স্থাপন করেছে, সে এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা বেশি। এমনকি ভূমি ধস হয় এমন এলাকাগুলোতেই পাহাড় কাটা ও গাছ কাটার কার্যক্রম বেশি। এখন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য এরকম বড় এলাকা যদি পাহাড় কাটা ও গাছ কাটা হয়, তাহলে সেই জায়গাতে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু তাদের একটা লিমিটেড স্ক্যালের মধ্যে রাখতে এবং জায়গা দিতে হবে, এটা তো সত্য। তবে রোহিঙ্গারা যে চ্যানেলে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তাতে তাদেরকে এই মুহূর্তেই অন্য জায়গায় সরিয়ে না নিয়ে, সেই চ্যানেলের কাছাকাছি কোনো জায়গার মধ্যেই রাখতে হবে। রোহিঙ্গাদের মাইলের পর মাইল চ্যানেল থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় একটা জোন করে রাখা যাবে, এটাও তো সম্ভব বা বাস্তব সম্মত হবে না। চট্টগ্রাম শহরে প্রায় অর্ধেকেরও বেশি পাহাড় কেটে লেভেল করে ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। সেই জায়গাতে নিঃসন্দেহে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে এবং ঘটছে। ফলে চট্টগ্রাম শহরে আমরা দেখতে পাই, তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে অর্ধেকেরও বেশি পানিতে ডুবে যায়। তার কারণ কিন্তু আজকের পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা। তবে আমরা এখনই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারব না যে, একটি বা দুটি পাহাড় কেটে কেটে একটা বিশাল জায়গায় রোহিঙ্গাদের বসতি স্থাপন করতে দিচ্ছি বিধায় পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে, এটা কিন্তু তা নয়। আবার রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থাটাও যুক্তিসঙ্গত হবে না। কারণ, সেখানে যদি সাইক্লোন হয় তাহলে সেসব এলাকার লোকজন কোথায় যাবে। আবার তাদের যদি সাইক্লোন সেন্টার আনতে গেলে ওই চ্যানেল থেকে অনেক দূরে নিয়ে আসতে হবে। সেই ব্যবস্থা কে করে দিবে বা কে নিবে এত সংখ্যক লোককে আনার দায়িত্ব?
রোহিঙ্গাদের ঘটনা তো একটা ইমেডিয়েট ঘটনা। আবার তাদের স্যানিটেশন, রান্না, গোসলের সু-ব্যবস্থা, কাপড়-চোপড় ধোয়া এবং শুকানোর ব্যবস্থা এগুলো সব কিছইু বসতির মধ্য রাখতে হবে। পরিবেশ বিপর্যয় এড়াতে হলে একটা টিম ও ব্যবস্থাপনা করে একটা প্ল্যান মাফিক জায়গায় নিয়ে আসতে হবে।
পরিচিতি: অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, ঢাবি.
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ