যে কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় ধুঁকছে ক্রিকেট দল
মোস্তফা মামুন
বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের যে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে টেস্ট সিরিজটি খুব ভালো কাটছে না, তা দলের ব্যাটিং এবং বোলিং লাইন আপের দিকে তাকালেই বোঝা যাচ্ছে। ক্রিকেটারদের ভালো না করার ব্যাখ্যা হচ্ছে, আসলে ক্রিকেটাররা দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে ভালো ব্যাটিং করার উপযুক্ত নয়, আমাদের ব্যাটিংটা অ্যাওয়ে কন্ডিশনে যথেষ্ট উপযুক্ত নয়, তার প্রমাণ হচ্ছে আসলে এই সিরিজটি। এটি হচ্ছে গত কয়েক বছরে দেশের বাইরে বা এই উপমহাদেশের বাইরে আমাদের খেলোয়াড়রা ম্যাচ যে খুব একটা খেলেননি, আজকের ব্যর্থতা হলো বড় কারণ। বিশেষ করে ক্রিকেটের ক্ষেত্রে আমাদের এই উপমহাদেশের কন্ডিশন আর দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনের মাঝে অনেক পার্থক্য থাকে। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ক্রিকেটাররা একটি ইনিংসে ভালো করলেও আমরা আসলে ভুলে গিয়েছিলাম যে, আমাদের টেস্ট ক্রিকেটটা দেশের বাইরে অনুপযোগী। কেননা, আমরা যখন দেশের মাটিতে ক্রিকেট খেলি তখন আমারা আমাদের একদম নিজেদের পছন্দমতো উইকেটে খেলেছি। কিন্তু দেশের বাইরে তো একদমই অন্যরকম উইকেটে খেলতে হয়। দেশের মাটিতে অনেক সময় স্পিনার দলকে জিতানোর ভূমিকা পালন করে কিন্তু বিদেশের মাটিতে সে সুবিধা গ্রহণ করতে পারছে না। আবার দেশে উইকেট বানানো হয়েছিল সেখানে পেস বোলিংটা খুব একটা সুবিধার ছিল না। তবে সত্যি বলতে পেস বোলার খুব একটা বোলিং করতে সুযোগও পায়নি। ফলে বিদেশের মাটিতে খেলতে গিয়ে পেস বোলারদের এই অনুপস্থিতিটা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। আবার খেলোয়াড়ারা দেশের মাটিতে ভালো করার কারণে তাদের মাঝে একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল ভালো খেলা খেলার জন্য। খেলোয়াড়দের মনস্তাত্তিক জায়গাটিতে উন্নতি হওয়ায় তারা ভেবেছিল যে, টেকনিক্যালে জায়গাটিতে সর্টলি কাভার করতে পারবে। সর্টলি কাভার করতে গিয়ে টেকনিক্যাল জায়গায় একটি ঘাটতি থেকে যায়। ফলে ক্রিকেটাররা দক্ষিণ আফিক্রায় টেস্ট খেলতে গিয়ে বুঝতে পারল যে মনস্তাত্তিক দিক দিয়ে স্কিলের ঘাটতি দূর করা যায় না। এখনো বিদেশের মাটিতে লংগার ভার্সনে দলটি যে অনেক পিছিয়ে সেটা বুঝাও গেল। একই রকম উইকেটে যখন আমাদের খেলোয়াড়রা ব্যাট করছে তখন মনে হচ্ছে ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেট, আবার দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ব্যাটিং করছে তখন সে উইকেটটাই মনে হচ্ছে ভয়ঙ্কর। এর কারণ আসলে তেমন কিছু না। তবে উইকেটটা যে ব্যাটিং এর জন্য অনুকূল বিষয়টি সেরকম নয়। বিষয়টি বল যখন বাউন্স করে বা বল যখন একটু উপরে উঠে যায়, আমাদের ক্রিকেটাররা সে বলটাকে খেলতে অভ্যস্ত না। আমাদের ক্রিকেটাররা একটু ফ্রন্টফুটে খেলতে অভ্যস্ত। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমাদের বোলিং সেরকম একটা পেসও নেই আবার উইকেট থেকেও যেহেতু মুভমেন্ট পাচ্ছে না। ফলে বাউন্সটুকু আদায় করার জন্য অভিজ্ঞতা, শারীরিক স্কিল্ড এবং যে ধরনের টেকনিক্যাল এট্রিবিউট থাকতে হয়, সেগুলো আবার আমাদের বোলারদের মধ্যে নেই। ফলে আমাদের বোলাররা এই উইকেট থেকে কোনো সুবিধা পাচ্ছে না বরং তারা খুব সহজেই খেলতে পারছে এবং দ্রুত রান বের করে নিতে পারছে। ফলে এক্ষেত্রে আমাদের ক্রিকেট টিমকে বিদেশের মাটিতে খেলার উপযুক্ত করার জন্য ক্রিকেট সূচি আছে, সেখানে নতুন ভাবে চিন্তা করতে হবে। আবার বিদেশের মাটি ওয়ানডে ক্রিকেটে ভালো করার জন্য আমাদের চিন্তা কাজ করছিল যে, টেস্টেও ভালো ক্রিকেট খেলতে পারবে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটটা বুঝতে হবে যে, এটা আসলেই অন্যরকম। এখন ক্রিকেট গ্লোবালাইজেশনের কারণে ওয়ানডে ক্রিকেটে সব দেশেই ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেট বানানো হয়ে থাকে। ফলে সেখানে আমাদের খেলোয়াড়রা দক্ষতার পরিচয় দিতে পারে। ওয়ানডে ক্রিকেটে হয়তো দর্শক এবং আইসিসি ও অন্যান্য বিষয় মাথায় রেখে উইকেট বানিয়ে থাকে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটটা নিজেদের মতো হয়। সে উইকেটে আমাদের খেলার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। দক্ষতা অর্জনের জন্য অনুশীলন সূচি ঢেলে সাজাতে হবে এবং আমাদের যে অন্যান্য অনুর্ধ্ব দল গুলো আছে সেগুলো আমাদের উপমহাদেশের বাইরে বেশি বেশি খেলার জন্য পাঠাতে হবে। এমনকি আমাদের দেশে দু-একটা বাউন্স উইকেট বানাতে হবে। এতে করে আমাদের বোলাররা উৎসাহিত হতে পারে। এবং এতে করে কয়েকজন এক্সট্রা বোলার পেতে পারি। সবকিছু নিয়ে আমাদের একটি অভিজ্ঞতা হলো। আমাদের মাঝে একটি ভুল ধারণা তৈরি হয়েছিল যে, আমরা বাইরের দেশেও ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি, সে ধারণাটা দূর হবে আশা করা যায়।
পরিচিতি : ক্রীড়া বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ : বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ