বিশেষ সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ. ম. রেজাউল করিম আইনজীবী সমিতির ব্যানার ব্যবহার করে দলীয় স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা হচ্ছে
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ড. বদরুল হাসান কচি
বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ক্ষোভ বা বিক্ষোভের বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
শ. ম. রেজাউল করিম : মাননীয় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার অসুস্থতার কথা ব্যক্ত করে নিজ স্বাক্ষর সম্বলিত চিঠির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেছেন। সেই প্রেক্ষিতেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি তার কোনো সহকর্মী, আইনজীবী কিংবা গণমাধ্যমের কাউকেই বলেননি যে, তিনি চাপের মুখে ছুটি নিয়েছেন। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এবং সম্পাদক একই দলের যুগ্ম মহাসচিব। ফলে তারা সুপ্রিম কোর্ট বারের ব্যানারকে ব্যবহার করে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে দলীয় উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছেন। আমার মনে হয়, বিএনপি সকল আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যর্থ হয়ে এমন অভিযোগ তুলে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।
বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সিনিয়র আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ করে প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হওয়ার কথা বলেছেন, এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি?
শ. ম. রেজাউল করিম : যেকোনো সংকটে আইনজীবী সমিতি সিনিয়র আইনজীবীদের পরামর্শ চাইতে পারেন। তবে এখনো তেমন কোনো অনাকাক্সিক্ষত, অপ্রত্যাশিত বা শঙ্কাজনক ঘটনা ঘটেনি যে, সিনিয়র আইনজীবীদের পরামর্শের দরকার পড়েছে। আমি মনে করি, বিএনপি সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন উত্তপ্ত করে সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে একটা খারাপ বার্তা পৌঁছানোর অপপ্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। আমি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক হিসেবে চ্যালেঞ্জ করে বলছি, প্রধান বিচারপতির ছুটি নিয়ে বিএনপির আনিত অভিযোগের পক্ষে তাদের কাছে কোনো তথ্য, উপাত্ত কিছুই নেই যে, তারা প্রমাণ করবেন উনি (প্রধান বিচারপতি) ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছুটি নিয়েছেন। আইনজীবী সমিতির কল্যাণকর যেকোনো উদ্যোগের প্রতি আমরা স্বাগত জানাই কিন্তু উদ্যোগের উদ্দেশ্য যদি অসৎ হয়, তাহলে সে জাতীয় উদ্যোগের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাধারণ আইনজীবীরা বাধ্য হবেন। সেক্ষেত্রে তাদের রাজনৈতিক অপচেষ্টা ভেস্তে যাবে।
প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে, বিএনপির এমন অভিযোগের ব্যাপারে কী বলবেন?
শ. ম. রেজাউল করিম : প্রধান বিচারপতি ছুটি চাপ বা বাধ্য হয়ে নেননি। তিনি অসুস্থ সেজন্য বিশ্রাম চেয়েছেন। অনেকেই এই ছুটির সঙ্গে ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের ইস্যুটি টেনে আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, যে রায়কে ঘিরে আলাপ আলোচনা-বিতর্ক শুরু হয়েছে, সেই রায় কিন্তু প্রধান বিচারপতি একা দেননি। সেখানে অপর পাঁচজন বিচারপতিও স্বাক্ষর করেছেন। যারা এখনো স্বপদে আছেন এবং বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ফলে চাপ প্রয়োগ যদি করাই হয়, তবে শুধু একজনের বিরুদ্ধে চাপ কেন করা হবে? সবার বিরুদ্ধেই তো চাপ সৃষ্টি করা হতো। ফলে এটা একটা হাস্যকর অভিযোগ। এছাড়া চাপ প্রয়োগের কোনো প্রশ্নই আসে না। কারণ, রায়ের পরে প্রধান বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি, আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও ইদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন তিনি। তাছাড়া জাতীয় সংসদে এই রায়ের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে মোকাবেলা করার প্রস্তাব পাস হয়েছে। সেখানেও কিন্তু আইন বহির্ভূত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের প্রসঙ্গ আসেনি।
প্রধান বিচারপতি ক্যান্সারে আক্রান্ত সে বিষয়ে সন্দেহের আবকাশ আছে কি-না?
শ. ম. রেজাউল করিম : প্রধান বিচারপতি ক্যান্সারের রোগী এটা অনেকের চেয়ে আমি ভালো জানি। দীর্ঘদিন যাবত তিনি ক্যান্সারে ভুগছেন। ক্যান্সারের চিকিৎসায় তিনি সরকারি সহযোগিতাও নিয়েছেন। এছাড়া গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে সুপ্রিম কোর্টে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতে তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন, তিনি ক্যান্সারের রোগী। উনি (প্রধান বিচারপতি) তার ছুটির আবেদনেও উল্লেখ করেছেন তিনি ক্যান্সারসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত। আর এসব যদি অসত্য হত তাহলে প্রধান বিচারপতি নিজেই কিন্তু তার রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে প্রতিবাদ করতে পারতেন। প্রধান বিচারপতি গ্রেফতারকৃত বা অন্তরীণ নন। তিনি মুক্ত অবস্থায় থাকা মুক্ত মানুষ।
সম্পাদনা: আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ