‘বিদেশীদের নীল নকসা অনুযায়ী চলছে সরকার’
রফিক আহমেদ : তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, বিদেশীদের ও বিভিন্ন কোম্পানীর নীল নকসা অনুযায়ী চলছে সরকার। ভবিষ্যতেও তারা নীতি অনুযায়ী চলতে বলবে সরকার সেইভাবেই চলবে।
গতকাল রোববার সকাল ১১টায় পুরানা পল্টন মুক্তিভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের গ্যাসসম্পদ, বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি এবং সরকারি পরিকল্পনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বিদেশ ও বিভিন্ন কোম্পানী নির্ভর সরকারের জ্বালানী মহাপরিকল্পনা অব্যাহত থাকলে দফায় দফায় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়বে। তিনি জনস্বার্থে জ্বালানী মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবি জানান। তিনি বলেন, জাতীয় কমিটি ইতোমধ্যে খসড়া মহাপরিকল্পনা হাজির করেছে। এটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষিত হবে। তিনি বলেন, একসময় বলা হয়েছিল দেশে গ্যাসের সংকট নেই। তখন লক্ষ্য ছিল গ্যাস রপ্তানী করা। এখন বলা হচ্ছে, গ্যাসের সংকট আছে। এখনকার লক্ষ্য হলো এলএনজি আমদানি করা। তিনি সমুদ্রে রপ্তানীনীতি গ্যাস চুক্তি বাতিল করে, জনগণের শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত ও গ্যাস উত্তোলনে যথাযথ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানী তেলের দাম কমলেও আমাদের দেশে তা সমন্বয় করা হয়নি। এটি সমন্বয় করলে পুরো অর্থনীতির উৎপাদনশীলতার সুযোগ থাকবে। দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হতো, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আলোচনায় উঠত না।
‘বাংলাদেশের গ্যাসসম্পদ, বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি এবং সরকারি পরিকল্পনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। গ্যাস সম্পদ, বিদ্যুৎ, দাম বৃদ্ধি ও সরকারের পরিকল্পনা এবং গণশুনানীতে জনগণের মতামত বিষয়ক আলোচনা উত্থাপন করেন অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, রুহিন হোসেন প্রিন্স ও জোনায়েদ সাকী। আলোচনায় অংশ নেন, মো. শাহ আলম, সাইফুল হক, বজলুর রশিদ ফিরোজ, টিপু বিশ্বাস, আবুল হাসান রুবেল প্রমুখ। মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, সরকার মেগা প্রজেক্টের নামে দুর্নীতিবাজ ও কমিশনভোগীদের পকেট ভরাতে ব্যস্ত। দুর্নীতিবাজদের পকেট রক্ষিত থাকলেও সাধারণ জনগণের পকেট অরক্ষিত। এজন্য বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটতে চাইছে সরকার। বক্তারা হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, অযৌক্তিক ও অন্যায়ভাবে মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হলে আন্দোলনের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত প্রতিহত করা হবে।
বক্তারা আরও বলেন, ক’দিন আগে বিদ্যুৎ নিয়ে অনুষ্ঠিত গণশুনানীতে এটা প্রমাণ করা হয়েছে যে, প্রচলিত ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ৭ হাজার ৮শত ৪৩ কোটি টাকা কমানো যেত। এর ফলে বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ১.৫৬ টাকাও কমানো যেত। বক্তারা বিদ্যুৎ খাতে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি দূর করে রাষ্ট্রীয় খাতকে প্রাধান্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও দাম কমানোর দাবি জানান। বক্তারা গ্যাস খাত উন্নয়নেও উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। বক্তারা সুন্দরবনবিধ্বংসী রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনমত উপেক্ষা করে এই প্রকল্প অব্যাহত রাখার পরিণাম মোটেই শুভ হবে না। জনগণই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সুন্দরবন রক্ষা করবে।