বিশেষ সাক্ষাৎকারে ড. বদিউল আলম মজুমদার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার নিরপেক্ষতা, দৃঢ়তা ও শক্তিশালী অবস্থান
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মরিয়ম চম্পা
অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সুন্দর একটি নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে নির্বাচন পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট সকলের নিরপেক্ষতা, দৃঢ়তা ও শক্তিশালী অবস্থান। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন করা হয়Ñ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হবে জানতে চাইলে এ মন্তব্য করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) -এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এককথায় বলতে গেলে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে একধরনের সুরক্ষা বেড়া। এই বেড়ায় যদি ক্ষেত খায় তাহলে আর ক্ষেত রক্ষা করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা খুবই জরুরি। অর্থাৎ পক্ষপাতদুষ্ট নয় এমন আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী হওয়া চাই। একই সঙ্গে প্রশাসনকেও নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, নিরপেক্ষ প্রশাসন নির্বাচন কমিশনকে সব রকম সহায়তা প্রদান করতে হবে। একই সঙ্গে প্রশাসনের অংশ হিসেবে রিটার্নিং অফিসার বা সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষপাতদুষ্টহীন হতে হবে। যা নিরপেক্ষ নির্বাচনের আরেকটি শর্ত। এছাড়া আমাদের আইনি কাঠামো অর্থাৎ সাংবিধানিক বিধিবিধানও ঠিক থাকতে হবে। আমাদের ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ছিল না। আমাদের সাংবিধানিক কাঠামো অনুযায়ী আগামী সংসদ নির্বাচনও দলীয় সরকারের অধীনে হওয়ার কথা। সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটা একটা বড় বাধা। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধানে সু¯পষ্টভাবে বলা আছে, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন থাকবে। প্রকৃত পক্ষে একমাত্র সরকারই স্বাধীন! তাই সরকার না চাইলে কেউ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। অন্যটা হচ্ছে সাংবিধানিক বাধা। নির্বাচনের সময় সংসদ বহাল থাকবে বলে সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। এক্ষেত্রে যারা সংসদ সদস্য তার অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন। কাজেই আমাদের সাংবিধানিক কাঠামো গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অনুকূলে নয়।
তিনি বলেন, এককথায় এটা একটা অসম প্রক্রিয়া। অর্থাৎ সমতল ক্ষেত্রের অভাব। ফুটবল খেলায় যেমন সাইড বদলায় যেন কেউ সম্পূর্ণ সময় অসুবিধাজনক বা সুবিধাজনক অবস্থায় না থাকে। তাই আগামী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সব দলের জন্য সম সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের বর্তমান অবস্থাতে সমতল ক্ষেত্র নেই এবং সমতল ক্ষেত্র হওয়ার কোনো সম্ভাবনা এখনও দেখা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের প্রয়োজনে ভোটার তালিকাও সঠিক হতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচনি এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ ঠিক হতে হবে। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়াটা বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। ইতিমধ্যে আমাদের ভোটার তালিকায় কিছু অসংগতি দেখা গেছে। অতীতে যতগুলো হালনাগাদ হয়েছে সেখানে নারীরা বাদ পড়েছে। ২০১৩ সালে যে সীমানা পুনঃনির্ধারণ হয়েছে সেই নির্ধারিত সীমানা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তাই এসব মানদ-ের আলোকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে আশাবাদী হওয়াটা অত্যন্ত দুরূহ। এর পরেও আমরা আশাবাদী হতে চাই। ইতিমধ্যে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। এটা তখনই সত্যিকার অর্থে বিশ্বাসে পরিণত হবে যদি বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্তগুলো পালন করা হয়। ড. বদিউল আলম বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে চাইলে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী, কার্যকর ও নিরপেক্ষ হতে হবে। একইসঙ্গে সব দলের প্রতি সম সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট বা বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না। এটা নির্বাচন কমিশনকে কঠোরভাবে দেখতে হবে। এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে বলেও মনে করেন এই রাজনৈতিক ভাষ্যকার।
সম্পাদনা: আশিক রহমান