মুসলিম হলেই সন্ত্রাসী, অন্যরা নিঃসঙ্গ শিকারি!
মাহদী মাহমুদ
যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে বন্দুক হামলায় ৫৯ জন নিহত হওয়ার ঘটনাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ পাশ্চাত্য মিডিয়া ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘সন্ত্রাস’ (টেরর) এবং হামলাকারীকে ‘সন্ত্রাসী’ (টেররিস্ট) বলতে নারাজ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উক্ত ঘটনাকে ‘শয়তানের কাজ’ ও লাস ভেগাস মেট্রোপলিটন পুলিশের শেরিফ জোসেফ লম্বার্ডো, স্টিফেন প্যাডককে সন্ত্রাসী নয় বরং ‘নিঃসঙ্গ শিকারি’ বলে অভিহিত করেছেন। বেশির ভাগ মার্কিনি লাস ভেগাসের ঘটনাকে একটি সন্ত্রাসী হামলা হিসেবেই বিশ্বাস করেন। লাস ভেগাসের সন্ত্রাসী হামলার পরপরই মার্কিন সংগীত শিল্পী আরিয়ানা গ্রান্ডে তার টুইট বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে দাবি জানান, ওই হামলাকে তার প্রকৃত নামে আখ্যায়িত করতে। এর আগেও কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের অরোরাতে সিনেমা হলে হামলাকারী জেমস হোমস (হামলায় ১২ জন নিহত হয়), কিংবা নর্থ ক্যারোলিনায় গির্জায় হামলাকারী (হামলায় ৯ জন নিহত হয়), সেগুলো মার্কিন প্রশাসনে ‘নিঃসঙ্গ হামলাকারী’ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
লন্ডন সাবওয়ে হামলার হোতা কে এবং তার উদ্দেশ্য কী ছিলÑ তা বিন্দুমাত্র প্রকাশিত হওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উক্ত ব্যক্তিকে ‘পরাজিত সন্ত্রাস’ আখ্যা দিয়ে তার ‘মুসলিম ব্যান’ এর যৌক্তিকতা তুলে ধরার প্রয়াস চালান। নেভাডা অঙ্গরাজ্যের আইনে সন্ত্রাস সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিধিমালা থাকলেও এসব ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা আখ্যা দেওয়া হয়নি। ইরাকি বংশদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক মেহেদি হাসান তার প্রবন্ধে বলেছেন, প্রতি তিনজন কথিত ‘মুসলিম জিহাদি’র দুজনই পাশ্চাত্যে জন্মলাভ করেছে কিংবা পাশ্চাত্য ভাবধারায় লালিত-পালিত।
এ প্রসঙ্গে ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি পাশ্চাত্যের যুবসমাজের উদ্দেশে লেখা পত্রে যথার্থই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এ প্রশ্ন তুলতেই হবে, পাশ্চাত্যে জন্মগ্রহণ করা ব্যক্তিরা যারা বুদ্ধিবৃত্তিক এবং পাশ্চাত্য মানসিকতায় বেড়ে উঠেছেÑ কেন এসব উগ্রবাদী গোষ্ঠীর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে? এটা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য, তাদের কেউ কেউ মাত্র দু-একবার যুদ্ধ ক্ষেত্রে গিয়েই এতটা উগ্রবাদী হয়ে পড়েছে। এমনকি নিজেদের সহযোদ্ধাদের বুলেটে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিতেও দ্বিধা করছে না?’
গার্ডিয়ান পত্রিকার এলান ট্রেভিসের প্রকাশিত ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা ‘এমআই ফাইভ’ এর এক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ‘ধর্মান্ধ মুসলিম’ হওয়া তো দূরের কথা, এসব সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ ব্যক্তিই ধর্মীয় আচার পালনই করে না; বরং তারা মাদকাসক্ত এবং অসামাজিক জীবনযাপন করে থাকে।
মেহেদী হাসানের প্রবন্ধে দেখা যায়, পাশ্চাত্য যাদের মুসলিম সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করতে ক্ষণকালও দ্বিধা করে না, তাদের অধিকাংশেরই অ-ইসলাম সংশ্লিষ্ট সহিংস ইতিহাস বিদ্যমান।
যেমনÑ লন্ডন হামলার হোতা ৫২ বছর বয়সী খালেদ মাসুদ, যার জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যেই এবং ২০০৩ সালে জেলে অবস্থানরত অবস্থায় খ্রিস্টধর্ম থেকে ইসলাম গ্রহণ করে। ইসলাম গ্রহণের আগেই তার রয়েছে নৃশংস ঘটনা ঘটানোর ক্রিমিনাল হিস্ট্রি। ১৯৮৩ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে, আবার ২০০০ সালে এবং ২০০৩ সালে (ইসলাম গ্রহণের আগেই) তার বার বার সহিংস কর্মকা-Ñ কিংবা মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার ইতিহাস কারোর অজানা নয়। প্রখ্যাত ব্রিটিশ একাডেমিক এড্রিয়েন হিল্টন এ সিদ্ধান্তেই পৌঁছেন, ‘ইসলাম খালেদ মাসুদকে সহিংস করে তোলেনি; বরং আগে থেকেই সে একটা অমানুষ ছিল।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা! মার্কিন প্রশাসন, হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র সেবাস্টিয়ান গোর্কা ফক্স নিউজকে জানাচ্ছেন, ‘যুদ্ধটা বাস্তবিক! প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসী আইন আর মুসলিম ব্যান যুক্তিযুক্ত।’
লেখক : কলামিস্ট
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসেন