মেয়র সাঈদ খোকন ও কিছু কথা
রবিউল আলম
রক্তের গুনে নেতৃত্বে আসে, বংশ ভাল হলে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা করে নিতে পারলে, জনগণ আপনাকে নেতার আসনে একদিন না একদিন অধিষ্ঠিত করবেই। তাই নিজের যোগ্যতা নিজে অর্জন করতে হবে, তা না হলে নেতার আসনে বসলেই হবে না, অসম্মানজনক পন্থায় নেমে আসতে হবে। মেয়র হানিফ-এর পরিচয়ে, শেখ হাসিনার বিশ্বাস নিয়ে ঢাকাবাসীর ভোটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সাঈদ খোকন।
২৮ অক্টোবর অফিসার্স ক্লাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার জন্য প্রার্থনা করা হয়। ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি, সম্পাদক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ উক্ত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন। ৩৪নং ওয়ার্ডের সভাপতির দায়িত্ব থাকায় আমাকেও সেই অনুষ্ঠানে যেতে হয়েছে। বেলা একটার সময় অফিসার্স ক্লাবে এসে অবাক হয়ে চেয়ে আছি, এ কি দেখছি আমি! অবিশ্বাস্য লাগছে, মেয়র সাঈদ খোকন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অতিথিদের গ্রহণ করছেন, পাশে দাঁড়িয়ে আছেন লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন, মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নগর নেতা মো. দেলোয়ার ভাই, রমনা থানার সভাপতি মোখলেছুর রহমানসহ অনেক নেতা মেয়র সাহেবের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন। আমার কাছে অবাক হওয়ার বিষয়, জীবনে কখনো কোনো অনুষ্ঠানে, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের সভাপতি দাঁড়িয়ে আছেন, অতিথিদের গ্রহণ করছেন এমনটি দেখিনি। মেয়র হানিফ আজ আমাদের মধ্যে নেই, একদিন আমরাও থাকব না। অনেকক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে দেখেছিÑ চাচা, ভাই, নেতা, লিডার যাকে যেভাবে বিনয়ের সাথে বরণ করে নিচ্ছিলেন খোকন, মহামিলনের আনন্দ! বিরহের অনুভূতি। কারও চোখে মেয়র হানিফের জন্য কান্না, কারও চোখে শেখ হাসিনার জন্মদিনের আনন্দ অশ্রু। একে অন্যকে বলছেন, বাঘের ঘরে বাঘ হয় শুনেছি, আজকে দেখে যাও, মেয়রের ঘরে মেয়র হয়েছে। বাপের চাইতে একগুণ এগিয়ে আছে, মানুষকে কিভাবে সম্মান করছে দেখো। সাঈদ খোকনের কাছ থেকে যদি কেউ রাজনীতি ও মানুষের সঙ্গে কিভাবে ব্যবহার করতে তা শিখে তবে শেখ হাসিনার ভোটের অভাব হবে না। এখন অনেক নেতা আছেন, অহঙ্কারের জন্য যাদের কাছেই যাওয়া যায় না। কোথায় থাকেন তাও জানা যায় না। ভারপ্রাপ্ত প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা ঠোটে আঙুলের গোড়ালি দিয়ে বসে আছেন, হয়তো ভাবছেন গুরু নেই, কিন্তু সম্মান কম দেওয়া হয় নেই। সাঈদ খোকন বারবার চাচা, চাচা বলে ডাকতেই উত্তরের প্যানেল মেয়র উসমান গনি ও জামাল মোস্তফা চেয়ে আছেন। পুরো অনুষ্ঠানটি আনন্দ-বেদনায়, হাসি-কান্নায় ভরপুর হয়ে গেছে। একজন মানুষের ব্যবহারে একটি অনুষ্ঠান এত সুন্দর ও সফল হতে পারে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। কী হয়েছিল অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের, আমি আমার অনুভূতি লিখে হয়তো প্রকাশ করতে পারছি নাঈমুল ইসলাম খানের মতো সম্পাদক রয়েছেন বলেই। অনুষ্ঠানে তিন থেকে চার হাজার অতিথির মনের কথা আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না। তবে অনুমান করেছি, অনেকদিন পরে হলেও মেয়র সাঈদ খোকন শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হৃদয় থেকে কিছু কথা তুলে ধরেছেন।
১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার আগমনের দিন অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছিল। বাবা মেয়র হানিফ এর হাত ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে গিয়েছিলেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে মাথায় হাত রেখে আদর করে বলেছিলেন, লেখাপড়া করে মানুষ হও, সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করতে হবে বলে কেঁদে ফেলেন সাঈদ খোকন। সেদিন কি জানতাম পিতার গুরু দায়িত্ব আমাকে বইতে হবে। আমার কাছে উত্তর-দক্ষিণ নেই, আমি শেখ হাসিনা, শেখ মুজিব বুঝি। আনিসুল হক কাছে নেই, তার অবর্তমানে আমি সবাইকে আমন্ত্রণ করেছি। আমার বাবা ঢাকার মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের ২৫ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
আপনারা সবাই আমার মুরুব্বি। সবার দোয়া ছাড়া যেমন আমার কল্যাণ হতে পারে না, তেমনি সবার সহযোগিতা ছাড়া দলও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। দলীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা আমার জীবনের লক্ষ্য। শেখ হাসিনাকে আমরা যদি অনুসরণ করতে পারি, তার সততা, বিচক্ষণতা, রাষ্ট্র পরিচালনার দক্ষতা অনুসরণ করতে পারি, তবেই আমরা সফল হবো।
মেয়র হানিফ সুবক্তা ছিলেন। জাতির জনকের বক্তব্যের তুলনা চলে না। সাঈদ খোকনের বক্তব্য শুনে কেউ অবাক না হয়ে পারবেন না। সাঈদ খোকন জনতার নেতা, জনতার মধ্যেই থাকুন। মানবকল্যাণে নিবেদিত বাবার মতোই বড় নেতা ও মানুষ হোন। মানুষের কল্যানে কাজ করছেন, এগিয়ে যান, সঙ্গে সবাইকে পাবেন।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ