যে কারণে আমাদের নবী সা. নয়টি বিবাহ করেছিলেন
আমরা ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি। আমরা সবাই জানি আমাদের নবী (সা.) নয়টি বিবাহ করে ছিলেন। কিন্তু আমরা কি জানি, তিনি কেন নয়টি বিবাহ করে ছিলেন? এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই সাথে এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়ও বটে। আমাদের নবী (সা.) এর এই বিষয়টিকে সামনে রেখে প্রাচ্যবাদীরা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচার করার সুযোগ নিয়ে থাকে। তিনি নয়টি বিবাহ করতে পেরেছেন শুধুমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতার কারণে।
প্রাচ্যবাদীরা আমাদের নবী (সা.) কে ঈসা (আ.) এর সাথে তুলনা করে থাকে। তারা বলে, ঈসা (আ.) বিবাহ করেন নি। তিনি ছিলেন একজন পবিত্র ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি। আর মুহাম্মাদ (সা.) কে তারা নারীর প্রতি আসক্তিকর পুরুষ হিসেবে বিবেচিত করে। এবং তারা এটাকে পুজিকরেই ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়।আমাদের নবী (সা.) নয়টি বিয়ে করে মহান ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিয়েছে। নিচে সেই কারণগুলোই উল্লেখ করা হলো: ১. শেষ নবী মুহাম্মাদের (সা.) এর সাথে হযরত ঈসা (আ.) এর তুলনা করা কোনভাবেই ঠিক নয়। কেননা বিয়ে করা নবীদের জন্য কোন নিন্দিত বিষয় নয়। আল্লাহর প্রেরিত সকল নবীগণই বিবাহিত ছিলেন। আদম (আ.) বিবাহিত ছিলেন। ইবরাহিম (আ.) দুই বিবাহ করেছিলেন। এমনকি সোলাইমান (আ.) ৯৯টি বিবাহ করেছিলেন। উল্লেখিত এই নবীগণ সহ সকল নবীগণই সত্যবাদি ছিলেন, জ্ঞানী ছিলেন এবং আল্লাহর বার্তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নির্ভরশীল ছিলেন।
২ হযরত মুহাম্মাদ (সা.) একই সময় একাধিক স্ত্রীকে বিবাহ করেছিলেন। তখন একাধিক বিবাহ করার অনুমতি ছিলো তাই তখনকার মানুষ একাধিক বিবাহ করতো। এমনকি ইসলামী শরিয়তে এখনো একাধিক বিবাহে করা বৈধ।
৩. অবশ্য পরে মুসলিমদের একাধিক বিবাহ করার বিষয়টি কুরআন দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। এমনি একজন মুসলিম পুরুষ চাইলে এক সাথে চার জন স্ত্রী পর্যন্ত রাখতে পারবেন। আল্লাহপাক কুরআনে ইরশাদ করেছেন, আর যদি তোমরা এতিমদের (মেয়েদের) সাথে বেইনসাফী করার ব্যাপারে ভয় করো, তাহলে যেসব মেয়েদের তোমরা পছন্দ করো তাদের মধ্যে থেকে দুই, তিন বা চারজনকে বিয়ে করো। কিন্তু যদি তোমরা তাদের সাথে ইনসাফ করতে পারবে না বলে আশংকা করো, তাহলে একজনকেই বিয়ে করো। অথবা তোমাদের অধিকারে সেসব মেয়ে আছে তাদেরকে বিয়ে করো। বেইনসাফীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এটিই অধিকতর সঠিক পদ্ধতি। (নিসা: ৩)
৪. একটি বিষয় হচ্ছে, আমাদের নবী (সা.) অন্যান্য স্ত্রীদের করেছেন যখন তার বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি ছিলো। তার এই সকল বিবাহ শুধুমাত্র কামনা কারণে ছিলো না। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রয়োজনে তিনি এই বিবাহগুলো করেছেন। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর প্রথম স্ত্রী, খাদিজা ছিলেন তার একমাত্র স্ত্রী। বিয়ের প্রায় ২০ বছর পর তিনি মারা যান। খাদিজাকেই তিনি বিবাহ করেছিলেন পরিপূর্ণ যুবক বয়সে। তার এই যৌনে সর্বাধিক যৌন চাহিদা থাকা সত্ত্বেও, তিনি খাদিজা (রা.) সাথে অন্য কোন স্ত্রীকে একসাথে রাখার কথা চিন্তাও করেননি। ৫. খাদিজার মৃত্যুর পর তিনি বেশিরভাগ স্ত্রীকেই বিবাহ করেছিলেন। খাদিজা (রা.) বয়সে বড় ছিলেন, সৌন্দর্যহীন ছিলেন এবং পূর্বে বিবাহিত ছিলেন। শুধু মাত্র আয়েশা (রা.) ছিলেন ছিলেন যুবক ও কুমারী নারী। অন্য অনেক নারী নবী (সা.) এর কাছে নিজেকে উপস্থাপন করেছিল, কিন্তু তিনি তাদেরকে সবিনয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
৬. আমাদের নবী (সা.) বেশ কয়েকটি বিবাহ করেছেন। তার এই সকল বিবাহের জন্য একটি একটি কারণ ছিল; অন্য কোনও গোত্র বা গোত্রের সাথে একাত্মতাবোধ করার জন্য, অথবা একজন শহীদের শহীদকে বশীভূত করার জন্য অথবা এমন কোন নারীকে সম্মান করার জন্য, যাকে কেউ বিয়ে করতে চান না ৃ ইত্যাদি।
৭. হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তার সকল স্ত্রীদের প্রতি নিরপেক্ষ অনুভূতি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে একটি আদর্শ উদাহরণ ছিলেন, তিনি তাদের মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণ করতেন না। এমনকি অন্য স্ত্রীদের তুলনায় আয়েশা (রা.) এর প্রতি বিশেষ অনুভূতিও প্রকাশ করতেন না। সূত্র: টপ স্টোরিস