মিয়ানমারের মতো অসভ্য দেশের সাথে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি হতে পারে না
খন্দকার রুহুল আমিন
মিয়ানমারে যা ঘটেছে তা তাদের আভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার বিষয়। কিন্তু তারা আমাদেরকে এসমস্যার সাথে জড়িয়ে ফেলেছে । মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সব মিলিয়ে প্রায় দশ লক্ষ রোহিঙ্গা। মিয়ানমার সরকারের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ভীষণ চাপের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়েছে । এরা খুবই নিরূপায় হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ইউরোপ বা অনান্য দেশের তুলনায় পরিমানে অনেক বেশি । অন্যান্য দেশে এত রোহিঙ্গা নেই। বাংলাদেশ একা সবকিছু সামলাচ্ছে। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যথার্থই মাদার অফ হিউমনিটি বলা হয়। কারণ, তিনি ওখানে ছুটে গিয়েছেন, নিজ চোখে দেখেছেন রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র। তিনি বিশ্বব্যাপি বিষয়টিকে তুলে ধরার জন্য জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে কথা বলেছেন। তবে আমার দৃষ্টিতে মনে হয়, কূটনৈতিক তৎপরতা অপ্রতুল । কেননা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আন্তর্জাতিক মহল বা জাতিসংঘ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান হবে না। কিন্তু এর আগে তিনি বলেছেন, মিয়ানমার সরকারের সাথে আমাদের আলোচনা হচ্ছে। দ্বি-পাক্ষিকভাবে আমরা সমস্যা সমাধান করবো । উৎফুল্ল হয়ে তিনি বলেছিলেন মিয়ানমার সরকার রাজি হয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে । কিন্তু আমরা আগেই বলেছি, মিয়ানমার সরকারের যে বর্বরোচিত আচরণ, তাতে তাদের সাথে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় সমাধান করা সম্ভব নয়। আমি একটা উদাহরণ দিয়ে বলতে চাই, ১৯৭৪ সালে ভুট্টো এবং ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে কাশ্মীর ইস্্ুয নিয়ে যে দ্বি-পাক্ষিক শিমলা চুক্তি হয়েছিলো তা কিন্তু এখনো বাস্তবায়িত হয়নি । তাই আমি বলছি, মিয়ানমারের মতো অসভ্য দেশের সাথে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি হতে পারে না। আর এখন মিয়ানমার সরকার ১৯৯২ সালের চুক্তির কথা উল্লেখ করে বলছে যে, পরিচয় পত্র দেখে যাচাই বাছাই করে নিশ্চিত হয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে। অথচ রোহিঙ্গাদের থেকে মিয়ানমার আর্মি সব কেড়ে রেখে দিয়েছে। পরিচয়পত্র তারা কোথায় পাবে? তাই বাংলাদেশের জন্য এটা খুবই উৎকন্ঠার বিষয়। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ রোহিঙ্গার জন্য ছয় মাসের খাবার মজুত আছে। আর বাদবাকিটার তেমন কোনো ভরসা পাওয়া যায়নি। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য একটা বড় হুমকি থেকে যাচ্ছে । আবার কক্সবাজারের মোট জনসংখার তিনগুন বেশি রোহিঙ্গা এসে পড়েছে । কক্সবাজার আমাদের পর্যটন এলাকা, এটা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের একটা বড় খাত। এখন এটাও হুমকির মুখে পড়েছে । এখন সরকার এদেরকে বরিশালের একটা চরে নিয়ে রাখার কথা বলছে। তবে এটা আপাতত হতে পারে কিন্তু এটা দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে । ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বের পরাশক্তি গুলোর দরজায় কড়া নেড়ে নেড়ে তাদের সর্মথন আদায় করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিলেন। রাশিয়া, চায়না, ইন্ডিয়া এই তিন পরাশক্তি আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ।
দেখুন, ইন্ডিয়াকে আমরা সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছি , রাশিয়া থেকে আমরা অস্ত্র কিনছি, চায়নার সাথে পদ্মা সেতুসহ সব ধরনের বড় বড় মেগা প্রজেক্ট চলছে। তাই আমরা আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রের মাধ্যমে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করতে পারি, রোহিঙ্গাদেরকে তাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ।
লেখক: পরিচালক, এফবিসিসিআই
সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ