প্রধান বিচারপতির দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান হবে : আইনমন্ত্রী
জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না : আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, এর অনুসন্ধান করা হবে। অনুসন্ধানে যদি সত্যতা থাকে তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নেই। আইন ফলো করলেই হবে। গতকাল রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রীর সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেছেন, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোই এন্টি করাপশন কমিশনের আওতায়। এক্ষেত্রে দুদক নিজেই তদন্ত করতে পারে। অন্যথায় আমাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতেও তদন্ত শুরু হতে পারে। তাহলে আপনারা বুঝতেই পারছেন, কে এটার অনুসন্ধান করবে? বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে অভিযোগ আসার পর আইনমন্ত্রী এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
এসময় আইনমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, প্রধান বিচারপতি দেশে থাকা অবস্থায় ওইসব অভিযোগ সরকারের হাতে এলেও তাকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হল কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আইন অনুযায়ী বিচারপতি এস কে সিনহা এখনো বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। একজন প্রধান বিচারপতি পদটি একটি প্রতিষ্ঠান ও সাংবিধানিক পদ। ফলে তার বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো বা খামখেয়ালি করে কিছু করা সমীচীন হবে না।
আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি ছুটি নিয়ে ব্যক্তিগত সফরে বিদেশে গেছেন। রাষ্ট্রপতি তার অনুপস্থিতিতে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার দিয়েছেন। এ নিয়ে বিতর্কের কোনো ‘অবকাশ নেই’।
তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক মহল কোনো ইস্যু না পেয়ে খড়কুটো দিয়ে বিতর্ক তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যারা এ নিয়ে বিতর্ক করছে, তাদের একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। সেটা হাসিল হয়নি বলেই তাদের এই মায়াকান্না।
‘রাষ্ট্রপতিকে লেখা ছুটির আবেদনে অসুস্থতার কথা লেখার পরও গত শুক্রবার রাতে অস্ট্রেলিয়ার পথে রওনা হওয়ার আগে এক লিখিত বিবৃতিতে নিজেকে ‘সম্পূর্ণ সুস্থ’ বলেন বিচারপতি সিনহা’। প্রধান বিচারপতির এমন বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় তিনি ‘বিব্রত’। বিচার বিভাগ যাতে ‘কলুষিত না হয়’, সেজন্য তিনি নিজেই ‘সাময়িকভাবে’ যাচ্ছেন এবং আবার ফিরে আসবেন। প্রধান বিচারপতির এসব বক্তব্যে আমি হতভম্ব।
প্রধান বিচারপতির সুস্থতা নিয়ে প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি তার বক্তব্যে হতভম্ব। তিনি রাষ্ট্রপতিকে লিখেছেন তিনি অসুস্থ, অথচ সাতদিন পরে বলছেন সুস্থ। আসলে যখন প্রথমে বললেন, তখনই ডাক্তারি পরীক্ষা করা দরকার ছিল, কিন্তু তা হয় নাই।
প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ প্রমাণিত হলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এ ক্ষেত্রে একটা শূন্যতা আছে, তবে রাষ্ট্রপতির নিজস্ব কিছু ক্ষমতা আছে। অভিযোগের অনুসন্ধান হবে, তারপর আইনে যেভাবে আছে সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আইনসঙ্গত নয়। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি আইনমন্ত্রী।
আইনমন্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন টকশোতে সমালোচনার জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি পেশায় থাকাবস্থায়ও কোনোদিনও মিথ্যা তথ্য বা মিথ্যা কথা বলিনি। আমি অ্যাডভোকেট সিরাজুল হকের সন্তান। আমার বাবাও কোনোদিন কোনেঅ খারাপ মামলার ক্ষেত্রেও মিথ্যা কথা বলেননি। আমিও বলি না। যেসব অবার্চিন এসব কথা বলেন তাদেরই মিথ্যা বলার অভ্যাস। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ