দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে সমাজকল্যাণের শিক্ষার্থীরা
সমাজকল্যাণ বা সমাজকর্ম একটি সেবামূলক পেশা। আমাদের সোশ্যাল ওয়েল ফেয়ারের অনেকগুলো বিষয় আছে। একদিকে যেমন এটি শিক্ষা, আরেকদিকে দক্ষতা বৃদ্ধিতে এটি প্রয়োজনীয়। বৃহত্তর জনকল্যাণ মূলক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রণোদনা হিসেবে কাজ করে ‘সমাজকর্ম’। যাদের অপরাধ সংশোধন করার প্রয়োজন, তাদেরকে আমরা কারেকশনাল সার্ভিস দিই। সোশ্যাল ওয়েল ফেয়ারে আছে গ্রুপ ওয়ার্কের মাধ্যমে ব্যক্তি সংশোধনের ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে আমাদের সুদৃঢ় অভিজ্ঞতা একটা সমাজকে ইতিবাচক পথে পরিবর্তিত করতে পারে। সমাজকল্যাণের আরেকটি বিশেষ অংশ হল শ্রমকল্যাণ। সমাজকল্যাণ শিক্ষার সাথে এটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শ্রমকল্যাণে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, শ্রমিকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখভাল করা, শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা এবং শ্রমিকদের আতেœান্নয়ন, কর্মক্ষেত্রে সেবা প্রদান করা হয়। মৌলিক একটা সাবজেক্ট মেডিকেল সোশ্যাল ওয়ার্ক। কারণ, সমাজের অনেক মানুষ মানসিকভাবে অসুস্থ থাকে। দৈনন্দিন হসপিটাল এবং ক্লিনিক সেবায় এরা নিয়োজিত। যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ তাদেরকে মেডিকেল টিমের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। সমাজকল্যাণ শিক্ষার একটি মৌলিক জ্ঞান এটি যা মানুষের মনস্তাত্ত্বিক সমর্থন সৃষ্টি ও বৃদ্ধিতে কাজ করে। সোশ্যাল ডায়াগনষ্টিক বা মানুষের মন নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে এখানে। কিভাবে মানুষ সমাজে দক্ষতা অর্জন করতে পারে, কিভাবে কথা বলতে পারে, সে বিষয়ে আজ থেকে ১০০ বছর আগে গবেষণা করেন আমেরিকার এক ভদ্র মহিলা । এটা ফলো করেই আমরা সোশ্যাল ওয়ার্ক করে থাকি। তখন শিক্ষার ব্যাপ্তি ছিল এবং তিনিই প্রথম ব্যবহারিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। ব্যবহারিক শিক্ষাটা দু’ধরনের। একটা ক্লাস শিক্ষা, অন্যটা মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা। এই দুই শিক্ষার সমন্বয় হলো সমাজকল্যাণ। পৃথিবীতে এমন কম শিক্ষা আছে যেটা বাস্তবধর্মী, জীবনঘনিষ্ঠ। অপরদিকে ইদানিং কালে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা অনেকে নিগৃহীত হয়। অনেকের বাবা মা থাকে না, এতিম। এদের জন্য আমাদের চাইল্ডহুড ফেয়ার রয়েছে। এই যে বিশেষায়িত সেবা, সমাজকল্যাণ সেবা, মানুষের সার্বিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত। একদিকে আতেœান্নয়ন হয় এবং অপরদিকে সমাজের কল্যাণ সাধন করা হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সমাজকল্যাণের এই ভূমিকাটাকে যদি আমরা অর্জন করতে পারি, তাহলে ব্যাপক জ্ঞান লাভ হতে পারে। এই শিক্ষা নিজের জীবনের পাশাপাশি বৃহত্তর সমাজের উন্নয়নেও ভূমিকা পালন করে। এই শিক্ষার যথাযথ প্রয়োগে আমাদের সমাজ অনেক বেশি উন্নতি লাভ করতে পারে। আমাদের সাবজেক্টে ‘ভলানটারিজম’ বলে একটা শব্দ আছে, অর্থাৎ স্বেচ্ছা সেবিতা। অর্থাৎ কোনো বিনিময় ছাড়াই মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করা। আমরা যদি এই ভলানটারিজমকেও এগিয়ে নিতে পারি, তাহলে সমাজ কল্যাণে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। আজকে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে সমাজকল্যাণ বিষয়ে যারা জ্ঞান অর্জন করেছেন তারা রয়েছেন, যাদের অনেকেই দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে পরিচিত। এটাই হচ্ছে সমাজকল্যাণ বিষয়ের সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা। এই সাবজেক্টে যারা পড়ে তারা এই সাবজেক্টেই বেশির ভাগ নিয়োজিত হয় এবং নিজের রুটি-রুজির পাশাপাশি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সেবায় নিয়োজিত হয়। বাংলাদেশে সমাজকল্যাণ শিক্ষার আগমন ঘটেছে প্রায় ষাট বছর আগে। এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশের এনজিও গুলো এগিয়ে গেছে। এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী এই বিষয়ে অধ্যয়ন করছে। এই বিষয় অনেক বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
পরিচিতি: অধ্যাপক ও সাবেক পরিচালক, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান