নানা সমস্যায় জর্জরিত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা
প্রফেসর শাহেদা ওবায়েদ
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক সমস্যা। এখন যা দাঁড়িয়েছে, শিক্ষাও নেই, ব্যবস্থাও নেই। এই ব্যবস্থা দেখার জন্য ব্যবস্থাপকও নেই। শিক্ষা শিক্ষকদের হাতে থাকা উচিত। নেই। শিক্ষা শিক্ষকদের হাতে আনতে হবে। দলীয় ভিত্তিতে মনোনয়ন বন্ধ করতে হবে। যে কোনো সরকারের আমলেই দলীয় ভিত্তিতে শিক্ষা ডিপার্টমেন্টে কোনো রকম নিয়োগ বা মনোনয়ন চলবে না। এখানে শুধুমাত্র মেধা, যোগ্যতা, শিক্ষা এর বাইরে কোনো মানদ- থাকা উচিত নয়। আমাদের দেশে যাই হয়, সবই দলীয় ভিত্তিতে হয়। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থা এমনই যে, এখানে দলীয় ভিত্তিতে মনোনয়ন দিলে এরকম অবস্থাই হবে। যদি আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক থাকে, দলীয় ভিত্তিতে মনোনয়ন না দেওয়া হয়, ছাত্রকে মেধাবী হিসেবেই মূল্যায়ন করা হয়, তাহলে অবশ্যই তারা বিদেশে যাবে না। তারা দেশেই থাকবে। একজন মেধাবী ছাত্রের যেই স্যালারি, আর একজন থার্ডক্লাস পাওয়া ছাত্রের একই স্যালারি হলে মেধাবী ছাত্ররা কেন দেশে থাকবে? মা-বাবা-আতœীয়-স্বজন ফেলে চলে যাওয়া খুব সুখকর নয়। তারা বাধ্য হয়েই চলে যায়। কারণ, অনেকে জানে যে, এখানে মেধার মূল্যায়ন হবে না। এখানে দলীয় ভিত্তিতেই এর মূল্যায়ন হবে। কোনো মূল্যায়ন এখানে হবে না। শিক্ষা নিয়ে অনেকগুলো কমিটি আছে। তাহলে প্রশ্ন পত্র ফাঁস হয় কেন? কে ফাঁস করে? শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৫০-৬০টি কমিটি আছে। কোনো কমিটিতে আমি নেই। কিন্তু আমার চল্লিশ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। আমি কেন নেই, কারণ আমি আওয়ামী লীগ করি না। শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং খেলাধুলা এ বিষয়গুলোতে দলীয় ভিত্তিতে মনোনয়ন দিলে এমনই হবে। দলীয় কোনো মনোনয়ন হলেও সেটা হতে পারে, কিন্তু আগে মেধা ও যোগ্যতা দেখতে হবে। যে দেশে মেধা নেই, শিক্ষা নেই, সেটা তো কোনো দেশ নয়। মেধাশূন্য দেশ আর জঙ্গলের মধ্যে পার্থক্য কি? এজন্যই কিন্তু আজকের যুব সমাজ বিপথগামী। ব্লু-হোয়েল গামী। মাদকাসক্ত। এজন্যই তো যুবসমাজ ধ্বংসের মুখে চলে গেছে। কারণ, মেধার তো মূল্যায়ন হয় না। মেধাশূন্য হয়ে যাওয়া মানেই একটা দেশ পিছিয়ে পড়া। আদিকালে গুহায় যখন মানুষ বাস করতো, তখন মেধার দরকার হতো না। শারীরিক শক্তির দরকার হতো। আমরা আস্তে আস্তে সেদিকে চলে যাচ্ছি। আমরা যারা মেধাশূন্য লোক, আমরাই দেশে থাকছি। মেধাবীরা সব দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমরা দেশটাকে ভালোবেসে বাংলাদেশে ঠিকই থাকছি। কিন্তু আমরা বোকা দেখেই থাকছি, নাহলে তো চলে যেতাম। মেধাশূন্য হয়ে পড়লে কি হবে, দেশের এটা ভাবার জন্য খুব বেশি জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। কারণ, আমরা বুঝতেই পারছি, আমরা আদিম গুহার দিকে চলে যাচ্ছি, যে সময়ে মেধার কোনো প্রয়োজন হতো না। আমি সারাজীবন শিক্ষা ডিপার্টমেন্টে কাটিয়েছি। এখন শিক্ষা নিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছা করে না। কারণ, এত সমস্যা যে কোথা দিয়ে শুরু করব, কোথায় শেষ করব, বুঝতে পারছি না? যদি আমাদের শিক্ষক ভালো হয়, আমাদের পুরো সিস্টেমটা ভালো হয়, যেকোনো পদ্ধতিতে লেখাপড়াই কাজে লাগবে। সৃজনশীল পদ্ধতি কিংবা এম.সি.কিউ পদ্ধতি সবগুলোকেই কাজে লাগাতে পারি। যদি পরীক্ষার ব্যবস্থা ঠিক থাকে, মূল্যায়ন ঠিকমত হয়।
শিক্ষকের যদি মেধা থাকে এবং এ সমস্ত কিছু যদি ঠিকমতো সমন্বয়ে চলে, তাহলে সব ব্যবস্থাই কাজে লাগে। এসব পদ্ধতি বিদেশেও আছে। তাদেরতো আমাদের মতো এমন দুরবস্থা হয় না। যখনই যেকোনো সরকার আসে তারা নতুন কিছু করার চেষ্টা করে। নতুন কিছু করতে গিয়ে আসল যে বিষয়গুলো শিক্ষক আছে কি-না, ছাত্ররা এর জন্য প্রস্তুত কি-না, শিক্ষকদের ট্রেনিং আছে কি-না, আমাদের ছাত্রদের মেধা কতটুকু, তারা এ বিষয় বুঝতে পারবে কি-না এসব নিয়ে তো মাথা ঘামায় না। নতুন এসেছি, সুতরাং নতুন কিছু করতে হবে। যেকোনো পদ্ধতিই কাজে লাগে। যদি আমাদের সিস্টেমটা ঠিক থাকে। সিস্টেমটাকে আগে ঠিক রাখতে হবে।
পরিচিতি : শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : সানিম আহমেদ
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ