বিশেষ সাক্ষাৎকারে আফসান চৌধুরী যার বিরুদ্ধে এখন এত অভিযোগ এসেছে কীভাবে তিনি প্রধান বিচারপতি হয়ে গেলেন
আশিক রহমান: ষোড়শ সংশোধনীর রায় ও প্রধান বিচারপতিকে কেন্দ্র করে চলমান বিতর্কে সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়া মানে আমাদের রাষ্ট্রের দুর্বলতা প্রকাশ। আমার মনে হয়, সরকারি ও বিরোধী দল এই জিনিসগুলো বুঝতে পারছে না। তারা যে জায়গাটায় আঘাত করছে, তার নেতিবাচক প্রভাব আমাদের সবার উপর পড়ছেÑ আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন গবেষক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার আফসান চৌধুরী।
তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের আগে তো এস কে সিনহার বিরুদ্ধে আমরা অনিয়মের অভিযোগ তুলিনি। এ বিষয়ে আমরা কিছু জানতাম না। এখন তুলছি। এতে আমাদের প্রশাসনিক দুর্বলতা চোখে পড়ে। প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে এমন লোককে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ দেওয়া যাদের চরিত্র সম্পর্কে আমাদের কোনো সময়ই প্রশ্ন উঠবে না। যার বিরুদ্ধে এখন এত অভিযোগ এসেছে, কীভাবে তিনি প্রধান বিচারপতি হয়ে গেলেন। এটা তো বিব্রতকর। যাকে আপনারা প্রধান বিচারপতি করেছেন তিনি বিতর্কিত। এই বিতর্কটা আপনারা এতদিন সহ্য করলেন কী করে? বিচার বিভাগের যারা বলছেন এস কে সিনহার সঙ্গে তারা এখন বসবেন না, প্রশ্ন হচ্ছে এটা সাংবিধানিক কিনা। এসব প্রশ্ন আগে উঠেনি, এখন উঠছে। কারণ এখন একটু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। সবাই মিলে যদি এই জটিলটা নিরসন করেন তাহলে রাষ্ট্রের সুবিধা হয়।
তিনি আরও বলেন, অনাকাক্সিক্ষত এই বিতর্ক নিরসনে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। এস কে সিনহার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে, তা প্রমাণিত নয়। তবে এসব অভিযোগ খুব দ্রুত নিষ্পত্তি করা দরকার। এখানে আইন ও অধিকারের বিষয় রয়েছে, অভিযুক্তকে তা খ-ন করার সুযোগটুকু দিতে হবে। যে প্রক্রিয়ায় বিচারপতি নিয়োগ করা হয় তা আরও শক্তিশালী করা দরকার। সরকারের উচিত বর্তমান সুপ্রিম কোর্টে যেসব সদস্য রয়েছেন তাদের ব্যাপারেও একটু অনুসন্ধান করা, তাদের বিরুদ্ধেও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় কিনা ক্ষতিয়ে দেখা।
আফসান চৌধুরী বলেন, ষোড়শ সংশোধনী ও প্রধান বিচারপতিকে কেন্দ্র করে চলা বিতর্কে কেউ লাভবান হচ্ছে না। না আওয়ামী লীগ বা সরকার, কিংবা বিএনপি। দুই দলের কেউ এতে লাভবান হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ যা নিয়ে ভাবতই না তা নিয়ে এখন তারা ভাবছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ চিন্তিত। সাধারণ মানুষ বোঝে না যে, প্রধান বিচারপতির মতো এত বড় একজন মানুষ, নীতিগতভাবে আমরা সবাই যাকে সম্মান করি তার সম্পর্কে এত কথাবার্তা উঠেছে। সাধারণ মানুষ আরও চিন্তিত যে, সরকারের এত উপরের একজন মানুষের বিরুদ্ধে যদি অনিয়মের এত অভিযোগ থাকে তাহলে বাকিদের কী অবস্থা। সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, কিন্তু তা কেউ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বলে মনে হয় না।
তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে চলমান বিতর্কে যে ক্ষতিটা আমাদের হচ্ছে তা কারও চোখে পড়ছে না। এই ক্ষতিটা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক। প্রতিষ্ঠানটা অনেক বেশি দুর্বল হয়ে গেছে। যদি প্রমাণিত হয় প্রধান বিচারপতি অনিয়ম করেছেন তাহলে তো আমিও তখন অনিয়মের প্রতি আগ্রহী হবো। যদি তিনি অনিয়ম করে থাকেন তাহলে তো সঙ্গে সঙ্গে সরকারের তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া দরকার ছিল। সরকারের তো সারাক্ষণই তাদের নজরদারিতে রাখা দরকার। আগে থেকে কেন সরকার তাদের নজরদারিতে রাখেনি। এখানে প্রশাসনিক দুর্বলতাটা খুব প্রকাশ পায়। বিচার বিভাগের দুর্বলতার কথা আমি বলছি না, কিন্তু প্রশাসনিক দুর্বলতাটা প্রকাশ পাচ্ছে বলেও মনে করেন এই রাজনৈতিক ভাষ্যকার।