‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধিতে প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রিসভার অভিনন্দন রোহিঙ্গা নারী-শিশুর প্রতি নির্মমতায় কেউ স্বাভাবিক থাকতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী
উম্মুল ওয়ারা সুইটি ও আনিসুর রহমান তপন : রোহিঙ্গা নারী-শিশুর ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী যে নির্যাতন হয়েছে তা দেখে কারো পক্ষেই স্বাভাবিক থাকা সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি নির্মূলে যে নির্যাতন তারা চালিয়েছে এবং রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের উপর যে অমানুষিক নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। গতকাল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনাকালে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এসময় প্রধানমন্ত্রী প্রায় ১৪ হাজার রোহিঙ্গা এতিম শিশুকে শনাক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে জানিয়েছেন, তাদের আবাসনের জন্য পৃথক স্থান নির্ধারণের কাজ চলছে।
এদিকে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘে সাহসী ভূমিকা রাখায় খালিজ টাইমসসহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে সংবাদ প্রকাশ এবং ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধিতে ভূষিত করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা।
তাছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের বিষয়ে যে প্রস্তাব দিয়েছেন এবং নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যে মানবতার কাজ করেছেন, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা বিশ্বের মানুষের মনে নাড়া দিয়েছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সারা বিশ্বের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা প্রশংসা করে ‘এডিটোরিয়াল’ লিখেছে, এটা আমাদের জন্য কম পাওয়া নয়। এসময় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান তার নিজের লেখা একটি কবিতা পাঠ করে শোনান।
এছাড়াও মন্ত্রিসভায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি রোহিঙ্গা বিষয়ে মানবিক অবস্থান নেয়ায় ধন্যবাদ জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী এই প্রতিবেদককে বলেন, মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় ও খাদ্যের ব্যবস্থা করে বিশ্বে বাংলাদেশ ও এই জাতির মুখ উজ্জল করায় প্রধানমন্ত্রীকে আমি অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছি। তাছাড়া ধন্যবাদের পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা জানাই এজন্য যে, এবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। শেখ হাসিনা সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দের কাছে নিজেকে অনন্য সাধারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এছাড়াও স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যেভাবে ভারত আমাদের আশ্রয় দিয়েছে, তেমনই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের সময় যদি ভারত আমাদের কয়েক লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় না দিত, তবে বাংলাদেশী নাগরিকদের হতাহতের পরিমাণ, নির্যাতনে পরিমাণ ও শহীদদের সংখ্যার পরিমাণ আরো অনেক বেশি হত। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী মনে করেন কারও ভেতরে যদি মানবিকতা না থাকে তবে তার নেতৃত্ব কোনদিন পূর্ণতা পেতে পারে না। সেসব বিবেচনাতেই তিনি লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন। আর অনতিবিলম্বে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করে তিনি প্রমাণ করবেন যে, শেখ হাসিনা শুধু ‘স্টার অব দি ইষ্ট’ নয়, তিনি পুরো বিশ্বের ‘স্টার’।
উল্লেখ্য, বৈঠকে ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ সফিউল আলম। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ