শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা চালু করতে হবে
মোহাম্মদ আবু নোমান
সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোর মেয়েরা এমনিতেই পড়ালেখা করার ক্ষেত্রে আর্থিক সংকটে ভোগে। তার ওপর যদি বখাটেরা উত্ত্যক্ত করে, তাহলে তো কথাই নেই। ওই মেয়েকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। ইভটিজিংয়ের শাস্তি পায় নিরীহ মেয়েটি। অর্থাৎ অপরাধী শাস্তি না পেয়ে পেল নিরপরাধী। গণমাধ্যমের খবর পড়ে বা শুনে যৎসামান্যই জানা যায়। লোকলজ্জার ভয়ে অনেক ঘটনাই চাপা থেকে যায়। প্রকৃতপক্ষে এই সমস্যার গভীরতা পরিমাপ করা কঠিন। বখাটে তৈরি হওয়ার পেছনে পরিবারও অনেকটা দায়ী। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো স্কুলে পড়াতে চাই, ভালো খাবার দিতে চাই, ভালো পোশাক দিতে চাই; কিন্তু ভালো চরিত্র গঠনের শিক্ষা দিতে চাই না। বিত্তশালী, প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক আশির্বাদপুষ্ট পরিবারের সন্তানরা আজ ধর্ষণ, হত্যাসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। ইতোপূর্বে রাজধানীর চামেলীবাগে স্ত্রীসহ পুলিশের পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান দম্পতির কিশোরী মেয়ে ঐশী জড়িত থাকার অভিযোগ নাড়া দিয়েছিল গোটা দেশকে। এছাড়া বনানীর হোটেলকা-, বগুড়ার তুফানকা-, সিলেটের বদরুলকা- প্রভৃতি ঘটনায় দেশবাসী আতঙ্কিত না হয়ে পারেনি। ঐশীর শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে। সেখানকার নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন তার ভাল লাগেনি। ঐশী ছিল বাবা-মায়ের আদরের মেয়ে। তাই তার সব আবদার পূরণের চেষ্টা করতেন। সাধ্য, সামর্থ্য, নৈতিকতা শিক্ষার কোনো চিন্তা না করে ঐশীকে ধানমন্ডির অক্সফোর্ড স্কুলে ভর্তি করে দেন বাবা-মা। অক্সফোর্ডে ভর্তি হয়েই পাল্টে যায় কিশোরী ঐশী। বেপরোয়া জীবনযাপন, অনিয়ন্ত্রিত প্রেম ও ইয়াবার মত জঘন্য মাদক সেবনে ডুবে যায় সে। মাসে দেড় লাখ টাকার অধিক ছিল ঐশীর হাত খরচ। তাহলে পরিবারটি চলত কত খরচে? বিলাসহুল ফ্ল্যাটে ভাড়াই জুটতো কিভাবে? সরকারি চাকরি করে এত বিলাসিতা কিভাবে সম্ভব? একজন এসআই এর যদি এত বিশাল পরিমাণ মাসিক অবৈধ অর্থের পার্মানেন্ট সোর্স থাকে, তাহলে তার উপরের যারা হর্তাকর্তা আছেন, তাদেরও তো নিশ্চয় ভাগ দিয়েই চলতে হয়। নাকি কেউ টেরই পায় না কিছু? একথা ঠিক যে, এদের কর্মকা- তাদের উপরের অফিসারদের প্রশ্রয় ছাড়া সম্ভব নয়। ঐশী ও আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদের পরিবারটিই তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন