আওয়ামী লীগের উন্নয়ন এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের হতাশা
রবিউল আলম
আদিকাল থেকে মানব সভ্যতা গড়ে তুলতে সামাজিক ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা নিয়ে সমাজ গঠন হয়। সামাজিক ঐক্য, জমিদারী প্রথার প্রতিবাদে রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়। পরাধীনতা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে রাজনীতিকে হাতিয়ার করে মুক্তির লক্ষ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। বৃটিশ বিতাড়িত হলেও বাঙালির মুক্তি অর্জিত হয়নি। পাকিস্তানি পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্তি চায় বাঙালি। সুদীর্ঘ ২৫ বছর একটি রাজনৈতিক ইস্যুর জন্য অপেক্ষা করতে হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পাকিস্তান সরকার যতবার, যত কৌশল করেছে বাঙালির মুক্তিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে, ততবারই মুজিবের কৌশলের কাছে পরাজিত হয়েছে। অবশেষে নির্বাচনে সাত কোটি বাঙালি জেগে উঠল। এক কাতারে দাঁড়িয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে প্রমাণ করেছে জনগণের দাবি, আমরা পাকিস্তান শাসন করতে পারি। পাকিস্তান তাদের রাজনৈতিক অদক্ষতা ও ক্ষমতা হারানোর ভয়ে বাঙালির উপর হামলা করে বসল। বিশ্ব জনমত যখন বাঙালির পক্ষে, পাকিস্তানিরা যখন ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করছে, তখনই জাতির জনকের ৭ মার্চের ভাষণে বলেন, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ৯ মাসে বাঙালি তাদের লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হয়।
রাজনীতির ইতিহাস আছে। রাজনীতির কৌশল আছে। কীভাবে, কী কারণে রাজনীতি তা উপলব্ধি করার বিষয় আছে। সারাবিশ্বে যেমন রাজনীতি আছে, জনগণের মতামতের অধিকার আছে, শান্তিশৃঙ্খলা ও উন্নয়নের বার্তা নিয়ে রাজনীতি হয়। বাঙালিও সে থেকে আলাদা নয়। আমাদেরও আশা আছে, আকাক্সক্ষা আছে। জাতির মনের কথা ও দাবি নিয়ে বিরোধী দল কথা বলবে।
জনগণের দাবি, দলের সঙ্গে মতবিনিময় করে সরকার থেকে আদায় করে আনবে। জনগণ তাদের ভোটের মাধ্যমে জনরায় দিবে কোন দল ক্ষমতায় থাকবে। জনগণ কি চায় তা না বোঝে, দলের মত না নিয়ে, বেগম জিয়া তার ছেলের সঙ্গে কথা বলে নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়েছিলেন। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে প্রতিশোধের আগুন জ্বলেছিল, জনগণের সম্পত্তি জ্বালিয়ে অবশেষে ঘরে গেলেন, কি পেলেন জানি না। ২০১৫ সালে কার কথায়, কার সঙ্গে কথা বলে জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি দিলেন তাও জানি না। শেখ হাসিনার উন্নয়ন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপালসহ অগণিত উন্নয়ন জনগণ দেখছে। দেশের মানুষকে অজ্ঞ বা অন্ধ মনে করার কোনো কারণ নেই। এসব যাতে সফলভাবে না করা যায় তার জন্য শুরু হলো গুপ্ত হত্যা, দেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করতে হলি আর্টিজ্যান হত্যাকা-সহ একাধিক হত্যাকা- ঘটানো হলো। রামপাল বিরোধী আন্দোলনে ‘হাওয়া’ দেওয়া হলো। তার আগে হেফাজতকে উসকানো হলো। বিচার বিভাগ নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। পাকিস্তানের অস্ত্র দিয়ে রোহিঙ্গা নিধন কর্মসূচি চলছে। একদিকে রোহিঙ্গা আসবে, বিএনপি-জামায়াত মুসলমানের দোহাই দিয়ে মসজিদ-মাদ্রাসার কমিটি নিয়ে আবার বাংলাদেশ জ্বালানোর পরিকল্পনা ছিল। শেখ হাসিনার মানবিক গুণের কাছে বিএনপির সেই আশাও গুড়েবালি। ধর্মীয় দলগুলো বুঝতে পেরেছে খাঁটি মুসলমান হলো শেখ হাসিনা, রোহিঙ্গাদের বুকে টেনে নিয়েছেন। বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশ যেখানে রোহিঙ্গা নিয়ে মুখ খুলছে না, পাকিস্তানসহ অনেক দেশ রোহিঙ্গা নিধনের অস্ত্র দিচ্ছে, স্বাভাবিক কারণেই বিএনপি জামায়াতের রাজনৈতিক ইস্যু শেষ হয়ে পড়েছে। এখন শুধু ফখরুল আর রিজভী সাহেব সরকারের ব্যর্থতার কথা বলা ছাড়া আর কী বলার আছে?
দীর্ঘদিন রাজনীতি করে বিএনপির কর্মীরাও হতাশ, বিএনপির নেতারাও নাকি জানেন, আওয়ামী লীগ নাকি নির্বাচনে জয় লাভের জন্য ষড়যন্ত্র করছে! বিএনপির হাতে এখন রাজনৈতিক ইস্যু নেই, নির্বাচনে জয় লাভের আশাও নেই, তারেক রহমান দেশে নেই, জামায়াতের অস্তিত্ব নেই, বিদেশে বিএনপির বন্ধু নেই, দেশে জ্বালাও-পোড়াও করার মানুষ নেই। চারিদিকে নেই আর নেই। যাও কিছু নেতাকর্মী আছে, কিন্তু বিএনপির রাজনীতি নেই।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান