‘গার্মেন্ট সংকট’ বিষয়টি মানুষের প্রচারণা
জলি তালুকদার
সত্যিকার অর্থে ‘গার্মেন্টস সংকট’ বিষয়টি মানুষের প্রচারণা। রানা প্লাজা ধ্বংসের পরেও আমাদের পোশাক খাতের অর্ডার যে খুব একটা কমেছে, সেটি আপনি বলতে পারবেন না। আমাদের ওয়েব সাইটে গেলে দেখা যাবে, আমাদের পোশাক খাতের অর্ডারে কোনো প্রভাব পড়েছে বলে আমার মনে হয় না। আমরা ভেবেছিলাম, রানা প্লাজা ধ্বংসের পর আমাদের দেশে অর্ডারটা কমে যাবে, সেটা কিন্তু হয়নি। এই না হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো আমাদের গার্মেন্টস মালিকদের সস্তা শ্রম। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং বায়ারদের জন্যেও সস্তা শ্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশে বিদেশি বায়াররা কম টাকায় কাঁচামাল পাচ্ছে এবং সস্তা শ্রম পাচ্ছে। আমাদের চেয়ে অর্থনীতিতে দূর্বল নেপালের চেয়েও আমাদের দেশে নূন্যতম মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া যায়। এর ফলে পোশাক খাতের অর্ডার কমেনি। এসব সমস্যা হচ্ছে ছোট ছোট ফ্যাক্টরি যেগুলোর কোনো স্ট্রাকচারাল বিষয়াদি নেই। যাদের কোনো অনুমোদন নেই, যারা এসব অনুমোদন ছাড়া কাজ শুরু করেছে তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো হচ্ছে। ওভারঅল আমাদের অর্ডার কমেনি। এই প্রপাগান্ডাটা ভুল। আমেরিকার বাজারে আমাদের দেশের চাহিদা খুব একটা কমেছে বলে আমার মনে হয় না। আমেরিকা আমাদের সঙ্গে এটা একটা পলিটিক্যাল ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে এটাও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে হয় না। ওভারঅল বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের অবস্থান খারাপ নয়। যে কারণে খারাপ হচ্ছে সেটা হলো শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়ছে না, শ্রমিকরা যে পরিমাণ উৎপাদন করার কথা, সে পরিমাণ উৎপাদন করছে না। এই উৎপাদনশীলতা না বাড়ার অন্যতম কারণ হলো শ্রমিকদের যে পরিমাণ বেতন বা বোনাস দেওয়ার কথা সে পরিমাণ তারা পাচ্ছে না। বর্তমানে জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সব কিছুর দাম বেড়েছে। গ্যাস, বিদ্যুত, বাসা ভাড়া, চাল এমনকি মোটা চালের দামসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম বেড়েছে কিন্তু শ্রমিকরা চার বছর আগেও যে টাকা পেতো এখনো সেই টাকাই পাচ্ছে। শ্রমিকরা তাহলে কিভাবে চলে? এই মজুরিতে আসলে তাদের জীবন চলে না। এখনো শ্রমিকদের বিনা নোটিশে ছাটাই, বেতন আটকে রাখা, বোনাস না দেওয়া এ সমস্ত কারণেই কিছুটা উৎপাদনশীলতা কমেছে। এই উৎপাদনশীলতা কমার জন্য মালিকদের এই অনিয়মই দায়ি। বাংলাদেশের নূন্যতম শ্রম মূল্যের কারণে গার্মেন্টস শিল্প সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। আমি মনে করি মালিকরা যদি শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করে অর্থাৎ বাজার দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতনটা ধরা হয়, ঠিকমত বোনাস দেওয়া হয়, অযথা কর্মী ছাটাই না করা হয়, শ্রমিকদের রেশনের ব্যবস্থা করে তাদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকারটা দেওয়া হয়, শ্রমকিদের কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তাহলে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব।
পরিচিতি : সাধারণ সম্পাদক, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র
মতামত গ্রহণ : সাগর গনি
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ