নানা সমস্যায় জর্জরিত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা
সাহেদা ওবায়েদ
এই সৃজনশীল পদ্ধতি বিদেশেও আছে অন্য ফরম্যাটে। আমরা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছি না। কারণ, আমাদের সিস্টেমটাই ঠিক নয়। আমাদের ‘ডিম আগে না মুরগি আগে’ করতে করতেই সময় চলে যাচ্ছে। সুতরাং আমাদের কোনো ব্যবস্থাই কাজে লাগছে না। আমরা ভালো শিক্ষক তৈরি করছি না। পদ্ধতিতে না হয় পরে গেলাম। শিক্ষক আছে? কত ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা এখন দেশে আছে তার কোনো হিসেব আছে? কোনো পদ্ধতিই কাজে লাগবে না, সিস্টেম যদি ঠিক না হয়।
শিক্ষা ক্ষেত্রে দলীয় ভিত্তিতে মনোনয়ন, এতে আমার খুবই আপত্তি। দলীয় ভিত্তিতে মনোনয়ন হলে কোনো দিনই আমাদের প্রচার বা প্রসার কিছুই হবে না। এটি একটি বিশাল সমস্যা। এর আমূল পরিবর্তন দরকার। খালি ‘ডিজিটাল ডিজিটাল’ করলে কিছু হবে না। পুরো সিস্টেমটাই বদলানো দরকার। আজ পর্যন্ত কোনো শিক্ষক কি শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন? শিক্ষকের চেয়ে বেশি আর কে জানবে শিক্ষা নিয়ে? যিনি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদান করছেন, তিনি বেশি জানেন, না আপনারা বেশি জানেন? কোনো শিক্ষক তো মন্ত্রণালয়ের সচিব হয়নি। শিক্ষা ব্যবস্থা চালায় অন্য ডিপার্টমেন্টের লোক। কিভাবে হয়? এতে তো কোনো দিনই ভালো কিছু হবে না। কারণ, শিক্ষকরা তো এর মধ্যে নেই। শিক্ষকদের হাতে ছেড়ে দেখেন না কি হয়? শ্রেণিকক্ষে ছাত্রদের মধ্যে কি হচ্ছে একজন শিক্ষক ছাড়া কে বেশি বলতে পারে? আমি দেখি শিক্ষামন্ত্রী যারা হয়, বেশির ভাগই ব্যর্থ লোকজন হয়। একজন ব্যর্থ লোক কি করতে পারে? আমি শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে খুবই হতাশ। আমি যখন চাকরি করেছিলাম তখনো হতাশ ছিলাম, এখনো হতাশ। আমাদের দেশের ছেলেরা যারা বাইরে চলে যায় তারা ভালোই করে।
কমপক্ষে তার মেধাটা কাজে লাগছে। বাংলাদেশের মানুষের কাজে না হয় লাগল না। কিছু মানুষের কাজে তো লাগছে। তার নিজের একটা আত্মতৃপ্তি হচ্ছে যে, আমার মেধাটা কাজে লাগছে। মানুষের উপকার হচ্ছে। বাংলাদেশে থাকলে তো তার মেধার যথাযথ ব্যবহার হতো না। বাইরের দেশের একজন ছাত্রের ভেতর যদি কোনো মেধার পরিচয় পাওয়া যায়, তাকে সরকার সাপোর্ট দেয়। সাপোর্ট দিয়ে সে যাতে তার ফিল্ডে আরও ভালো করতে পারে সেটা সরকার দেখে। উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে, বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে যে একটু মেধার পরিচয় দেয়, তাকে সরকার ব্যাকিং দেয়। আমাদের দেশে একটা ছেলে ভালো কিছু করতে চাইলে তাকে টেনে কিভাবে নামাতে পারে, সেটা দেখা যায়। কোথায় কোন মন্ত্রীর ছেলে, এমপির ছেলে গিয়ে তার জায়গা নিয়ে যায়। এটা বোঝার জন্য তো কাউকে লাগে না। এটা এমনিতেই বোঝা যায়। তাহলে এ দেশে থাকবে কেন কেউ? সবার তো চাটুকারিতার অভ্যাস হবে না। এই মন্ত্রীর পায়ে ধরব, ওই এমপির কথা শুনব, এই অভ্যাস তো সবার থাকে না। স্কুল কলেজগুলোর যে গভর্নিং বডি আছে, মন্ত্রী-এমপিরা এর সঙ্গে যুক্ত থাকে। বেশির ভাগই আন্ডার মেট্রিক। এত কাজ কিভাবে তারা পরিচালনা করবেন? সব খানে দলবাজি করলে তো আর কিছু হয় না। দলবাজি করতে করতেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা শেষ হয়ে গেছে। সবগুলো মন্ত্রণালয়ের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হলো একটা স্পেশালাইজড ব্যাপার। যে পদার্থ পড়ায় তাকে দিয়ে বাংলা পড়ানো যাবে না। মন্ত্রীর ছেলে আর এমপির ভাগিনাকে দিয়ে শিক্ষা বিভাগ চালানো যাবে না। দেশে থাকবে কেউ আওয়ামী লীগ করবে, কেউ বিএনপি করবে। কিন্তু যখনই আমরা কোনো পদে বসি, চেয়ারে বসি তখনোই আমাদেরকে সব রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। আমি যতদিন চাকরি করেছি, কোনো রাজনৈতিক দলকে প্রশ্রয় দেইনি। শেষ পর্যন্ত আমাকে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছে। অনেক মানুষই আছে নিজের মনটাকে মেরে চাকরি করে। তারাও বুঝে এই দলীয়করণ করাটা ঠিক নয়। কিন্তু সবাই তো চাকরি ছেড়ে দিতে পারে না।
পরিচিতি : শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
মতামত গ্রহণ : সানিম আহমেদ
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ