সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা রাজনীতির চর্চা করবেন না : তথ্যমন্ত্রী
জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না : তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত থেকে রাজনীতি বা ইতিহাস চর্চা করবেন না। জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রের নয়, সামরিকতন্ত্রের প্রবক্তা। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জানিয়েছেন, ‘জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা।’ তথ্যমন্ত্রী সিইসির এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষন করে বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর নানা ঘটনাপ্রবাহের ভেতর দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন জিয়াউর রহমান। উর্দি পড়া অবস্থাতেই তিনি নির্বাচন করেন। আর জন্ম দেন তার দল বিএনপির। জিয়াউর রহমানের আমলেই স্বাধীনতা বিরোধীরা বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পায়। একাধিক রাজাকারকে তিনি মন্ত্রিসভায় জায়গা দেন। চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী শাহ আজিজুর রহমানকে করেন প্রধানমন্ত্রী। জামায়াত নেতা গোলাম আযমকে দেশে ফেরার অনুমতি দেন। আর উচ্চ আদালত থেকে একাধিক রায়ে জিয়াউর রহমানকে অবৈধ শাসকও বলা হয়েছে। এবং বলা হয়েছে, জিয়াউর রহমানের শাষনামল অবৈধ।
তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) যে ২০ দফা দাবি উত্থাপন করেছে তার বেশিরভাগই অযৌক্তিক, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও সংবিধান পরিপন্থী। বিএনপির ওই ২০ দফা নির্বাচনের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের জন্য নয় বরং রোড ব্লক করার জন্য।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নির্বাচনি লক্ষ্য স্থির না। তারা কখনও সহায়ক সরকার, কখনও নির্দলীয়, আবার কখনও নিরপেক্ষ সরকার চেয়েছে। বিএনপি আসলে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। বিএনপির নেতারা আসলে সকাল, বিকাল ও সন্ধ্যায় ভিন্ন ভিন্ন কথা বলেন। বিএনপির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দলীয় প্রার্থী, জোটের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোয়ন দিতে হবে। প্রার্থী মনোনয়নের আগে জোট করা অযৌক্তিক। তারা এ প্রস্তাব দিয়েছে মূলত জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। এটা চক্রান্ত।
স্বশস্ত্র বাহিনীকে নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার দাবির বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তিনশ জন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকেন একহাজার দুইশ জন। এতো লোক থাকার পরও স্বশস্ত্র বাহিনীকে কেন ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হবে? এ দাবি আরপিও পরিপস্থী। বিএনপি ঘোলাজলে অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে এই প্রস্তাব দিয়েছে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বহু কষ্টে সেনাবাহিনীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ওপর বিএনপি এতো দরদ দেখাচ্ছে কিন্তু তারাই সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। স্বাধীনতার পক্ষের কোনও দল আজ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সমালোচনা করেনি। সেনাবাহিনী নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করেছে এ রকম কথা আমরা বলিনি। সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনের পক্ষ নিয়েছে আমরা বলিনি। বিএনপি ও খালেদা জিয়া ২০০৮ সালে সেনাবাহিনীকে বিতর্কের জায়গায় নিয়ে গেছে। এখন নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাবটা তাদের বিতর্কের দিকে ঠেলে দেওয়া।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ইনু বলেন, সংবিধান ও আদালতের ক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতিরা অনেক ক্ষমতা রাখেন।তাদের এখতিয়ার, ক্ষমতা এবং স্বাধীনতার ভিত্তিতেই প্রধান বিচারপতি স্ব-ইচ্ছায় ছুটিতে গেছেন। আবার স্ব-ইচ্ছায় দেশে ফিরবেন এবং দায়িত্ব পালন করবেন। সুতরাং এখানে সরকারের কোনও হস্তক্ষেপ নেই। এখানে সরকারের কিছু করারও নেই। সংবিধানের প্রদত্ত ক্ষমতাবলেই সর্বোচ্চ আদালত এবং অন্যান্য আদালতগুলো পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের একটি টিভি চ্যানেলে ‘সংখ্যালঘু হওয়ায় তাকে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে’ এমন সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা এর জবাব দেবো। সম্পাদনা : ইয়াছির আরাফাত