খাদ্য ঘাটতি কমাতে মজুদ বাড়াতে হবে : আতিউর রহমান
জুয়াইরিয়া ফৌজিয়া : বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মজুদ অন্তত ১০ লাখ মেট্রিকটন থাকার কথা থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে স্বীকার কার করা হচ্ছে মজুদ পরিমাণ অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে চালের দাম সম্প্রতি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন,মজুদ কমে যাওয়াতেও সমস্যা হতো না। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এবং মিল মালিকরা নিজেদের ইচ্ছে মতো চালের দাম বৃদ্ধি করেছে। ফলে এ সংকট তৈরি হয়েছে। এমন সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আগামী অর্থবছরের শুরুতেই ১৫ লাখ মেট্রিকটন চাল মজুদ রাখা হবে।
যদিও গত কয়েক বছর ধরে সরকার বাংলাদেশকে খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণ হিসেবে দাবি করলেও গবেষকদের মতামত ভিন্ন। তারা বলছেন, গত তিন বছর ধরে খাদ্যের উৎপাদন থমকে আছে। কোন প্রবৃদ্ধি নেই। ফলে আমদানি বাড়াতে হয়েছে। কিন্তু এতে কী বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আদৌ কোন সংকট তৈরি হয়েছে?
এমন প্রশ্নের জবাবে বিবিসি বাংলার সাক্ষৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমান বলেন, আমার তা মনে হয় না। কারণ খাদ্য নিরাপত্তা শুধুমাত্র খাদ্য মজুদের উপর নির্ভর করে না। বাজারের সাথে যেহেতু গ্রামীণ সমাজ জড়িয়ে আছে, সেহেতু তাদের আয় রোজগার সম্পর্কে জানা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, টাকা থাকলে একটু দাম বেশি হলেও মানুষের কেনাকাটায় সমস্যা হয় না। আর এমন যদি হয় যে বাজারে কোন কারণে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে সেই পণ্যের দাম একটু বেড়ে যায়। এজন্য আসলে বাজার স্থিতিশীল রাখতে পণ্য মজুদ করে রাখতে হয় এবং বাজার ইন্টারভেনশনের জন্যই করতে হয়। কিন্তু আমাদের গবেষণায় যতটুকু ধরা পড়েছে, গ্রামবাংলার মানুষের আয় আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বড় কোন সংকট দেখা দেওয়ার আশংকা নেই।
কিন্তু যারা খাদ্য আমদানি করে তারা জানে সরকারের কাছে খাদ্য মজুদ কম। এজন্যই বাজারে চালের দাম বাড়ছে। আপনার কী মনে হয় এখন সরকারের একটা ইন্টারভেনশনের সময়?
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার মনে হয় হয়তো বাজার ব্যবস্থাপনায় খানিকটা দুর্বলতা ছিল। মনিটরিং কতটা সফল ছিল তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ আছে। দ্বিতীয়ত, সরকার আমদানির ব্যাপারে একটু দোদুল্যমানতায় ভুগেছেন বলেই সমস্যা তৈরি হয়ে থাকতে পারে।
এক সময় সাধারণ মানুষ ও অর্থনীতিবিদরা ভাবতো, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা থাকলে খাদ্যের নিরাপত্তা থাকবে। এই ভাবনা এখনো সেভাবেই দেখা হয়, না কি ভাবনায় কোন পরিবর্তন এসেছে?
জবাবে আতিউর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রেক্ষাপটে ওই ধারণা খানিকটা বদলে যাওয়ার কথা। কারণ, খাদ্য সংগ্রহ ও আমদানি করার সুযোগ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তবে একই সাথে আশেপাশের দেশেও যদি খাদ্য ঘাটটি দেখা দেয় সেক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেমন ২০০৮ সালে এমন সংকট তৈরি হয়েছিল। তখন খাদ্য কিনতে চেয়েও আমরা কিনতে পারিনি। তাই ফসলী মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে নায্যমূল্যে ফসল কিনে মজুদ রাখতে হবে। সূত্র : বিবিসি বাংলা