সাক্ষাৎকারে মনোবিদ অধ্যাপক ডা. মো. তাজুল ইসলাম মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরতা প্রত্যক্ষ করা রোহিঙ্গাদের মানসিক সুস্থতায় কাউন্সিলিং জরুরি
আশিক রহমান : মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন, জ্বালাও-পোড়াও, বর্বতার দৃশ্য নিজের চোখে দেখেছে রাখাইন জনগোষ্ঠী। অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের অনেকেই। পরিবারের লোকজনকেও নিপীড়নের শিকার হতে দেখেছেন। বর্বরতা ও নির্যাতনের শিকার যে লাখো মানুষ এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তারা মানসিকভাবে ভালো নেই। তাদের উপর ভয়াবহ মানসিক চাপ পড়েছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে একটা ভীতি কাজ করবে। মানুষের জন্য যেকোনো ভীতিকর অভিজ্ঞতাই শারীরিক, মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। রোঙ্গিাদের মানসিক ভীতি দূর করতে আমাদের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতেÑ আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন মনোবিজ্ঞানী ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট-এর অধ্যাপক ডা. মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যে ট্রমায় ভুগছে তা যখন ব্রেনে থেকে যায় তখন তিন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এক. তারা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। একই সঙ্গে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, আশ্রিত রোহিঙ্গারা জঙ্গি হতে পারে, বিপ্লবী হয়ে উঠতে পারে। আবার উল্টোটাও হতে পারে। মানসিকভাবে আরও বেশি অসুস্থ হতে পারে। বিষণœতায় ভুগতে পারে। তারা যে ভয়াবহতার শিকার হয়েছেন, খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছে বর্বরতা তা সারাজীবন তাড়িয়ে বেড়াতে পারে। সবসময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকা। বাংলাদেশে আসার পর তারা তো একটা পরগাছার মতো থাকবে। উদ্বাস্তুর জীবন তো অপমানকর। স্বাভাবিক, সুন্দর জীবন ও পড়ালেখা ছেড়ে যে শিশুরা এখানে এসেছে, একসময় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই কাজের সঙ্গে তাদের জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন, বর্বরতা প্রত্যক্ষ করা রোহিঙ্গা শিশু বা মানুষগুলোর কাউন্সিলিং করা জরুরি। তবে এই মুহূর্তে ফরমাল কাউন্সিলিংয়ের চেয়ে তাদের থাকা-খাওয়া, নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত করা যা তাহলে তা ভয়ভীতি দূর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা এখন এটা করছিও। কিন্তু সেটা যদি ভালোভাবে না করা হয়, বৈষম্যমূলক হয়, অর্থ্যাৎ কেউ পেল, কেউ পেল না অথবা তারা যদি এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন তাহলে তাদের মনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এটা হতে দেওয়া যাবে না। এ নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। মানসিকভাবে যাতে তারা ভালো থাকে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ডা. মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ভীতিকর একটা পরিস্থিতি থেকে আসা শিশুদের মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে হলে তাদের জন্য খেলাধুলা ও পড়ালেখার ব্যবস্থা করতে হবে। বিনোদনের ব্যবস্থাও করতে হবে। বড়দের জন্য আয় রোজগারের ব্যবস্থা করা দরকার। মানসিকভাবে যারা অনেক বেশি ভেঙে পড়েছেন তাদের জন্য বিশেষভাবে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এর মধ্য দিয়ে শিশু বা যেকোনো বয়সের আতঙ্কিত, ভীতিতে থাকা মানুষগুলোর মানসিক সুস্থতা ফিরতে পারে।
তিনি বলেন, মানসিকভাবে বিধ্বস্ত এসব মানুষের মানসিক সুস্থতায় মনোবিজ্ঞানীদের বড় ধরনের ভূমিকা পালন করার আছে। আমরা নানাভাবে এটা করে থাকি। এখনো করছি। রোহিঙ্গাদের মানসিক সুস্থতায় নানাভাবে আমরা কাজ করছি। এখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে দুর্গত মানুষদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা কীভাবে করতে হবে তার একটা তালিকা দেওয়া আছে। সেই অনুযায়ী অনেক স্বাস্থ্য ও এনজিও কর্মীকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষিতরা তা এখন কাজে লাগাচ্ছেন।
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ