আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে চলছে কচিং বানিজ্য সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিকালে কোচিংয়ের
বিপ্লব বিশ্বাস : আদালতের রায় অমান্য করে প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে রমরমা কোচিং ব্যবসা। রাজধানীতে অবৈধভাবে কোচিং ব্যবসা পরিচালনা করছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু অসাধু শিক্ষকরা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার পাশাপাশি নামে বেনামে কোচিং সেন্টার চালাচ্ছেন তারা। নানান প্রলোভন এবং পরীক্ষায় কম নাম্বার দেয়ার ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর ফার্মগেট, শ্যামলী, নিউ মার্কেট, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, মালিবাগ, মৌচাক, বেইলিরোড, কাকরাইল, নতুন বাজার, আরামবাগ, খিলক্ষেতসহ বিভিন্ন স্থানে একটি সিন্ডিকেট ফ্ল্যাট বা বাসা ভাড়া নিয়ে কোচিং ব্যবসা করছে। শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে প্রচারণা ব্যবহার করছে লোভনীয় অফার। শর্তভাগ পাশের নিশ্চিত করে দিচ্ছে সেই বিজ্ঞাপনে।
রাজধানীর প্রতিটি স্কুল ও কলেজের সামনের বা তার দেয়ালে মধ্যে এই বিজ্ঞাপন দেখা যায়। তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রকাশ্যে এসব কোচিং সেন্টারে দায়িত্বে না থাকলেও আড়ালে বসে নিয়ন্ত্রণ করছে। নিজের নামে কোচিং সেন্টার রেজিষ্ট্রেশন না নিলেও স্ত্রী কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে রেজিষ্ট্রেশন করে থাকেন। মনিপুর স্কুলের এক শিক্ষক তিনি নিজেই এসিসি পাঠশালা কোচিং সেন্টারটি নিয়ন্ত্রণ করছে। এই কোচিংয়ের আরো তিনটি শাখা রয়েছে। মনিপুর বিদ্যালয়ের পাশে একটি হলেও শাখা থাকলেও বাকি দুইটি মিরপুর পীরেরবাগ এলাকায় অবস্থিত। তিনি মনিপুর বিদ্যালয়ে চাকুরিরত অবস্থা এই কোচিং সেন্টারটি দীর্ঘ দিন ধরে পরিচালনা করছেন।
রুবিয়া সিদ্দিকী নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘শিক্ষকদের কাছে আমাদের হাত পা বাঁধা। ছেলে মেয়ে ভালো রেজাল্ট করবে এই আশায়, শিক্ষকদের পরামর্শে কোচিং করাতে হয়।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মনিপুর স্কুলের এক শিক্ষক জানান, কোচিং বন্ধের জন্য আদালতে রায় দিয়েছে। তবুও বন্ধ হচ্ছে না। শিক্ষকরা সকালে বিদ্যালয়ে আর বিকালে কোচিংয়ে সময় দেয়। ক্লাসে ভালো ভাবে পড়ালে শিক্ষার্থীদের আর প্রাইভেট কিংবা কোচিং করতে হয় না। শিক্ষকরাই কোচিং করার জন্য ক্লাসে পড়া ফাঁকি দিয়ে থাকেন।’
তিনি আরও বলেন, আমাদের স্কুলের প্রায় সব শিক্ষকরা কোচিংয়ে চাকুরি করেন। আবার বিকালের পর থেকে শিক্ষকরা তাদের বাসায় কয়েকটি ব্যাচে প্রাইভেট পড়ান। প্রতিটা ব্যাচে ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী থাকে। যারা প্রাইভেট পড়ে সেই শিক্ষার্থী পড়া না পারলেও তাদের রেজাল্ট ভালো হয়। সবই প্রাইভেটের কারিশমা। প্রথমে কোচিং ফি কম দিয়ে চালু করলেও সময়ের সাথে সাথে শিক্ষকরা তাদের ফি বাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা।
মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ফরহাদ হোসেন বলেন, কিছু দিন আগেও আমি ১৪ জন শিক্ষক চাকরিচ্যুত করেছি। আপনাদের সংবাদ প্রকাশ করার পর আমি আবারও ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমানে শিক্ষকদের সৃজনশীল সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই।নিজের ভালো ধারণা না থাকলে তারা কী ভাবে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল সর্ম্পকে শিখাবেন। শিক্ষকরা নিজেদের বাসায় নিয়ে মুখস্থ্ বিদ্যা দেয় শিক্ষার্থীদের। অভিবাবকরাও চায় তাদের ছেলে মেয়ে ভালো রেজাল্ট করুক। তাই বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে ভর্তি করান অবিভাবকরা।