শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা চালু করতে হবে
মোহাম্মদ আবু নোমান
সমাজের ধনী শ্রেণি বৈধ-অবৈধ পন্থায় টাকা রোজগার এবং ভোগ বিলাসেই মত্ত থাকে বেশির ভাগ সময়। সন্তানের চাহিবামাত্র টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড়, দামি মোবাইল, গাড়ি ইত্যাদি কিনে দিয়েই খালাস। অন্ধ স্নেহে সন্তানের কোনো ভুলত্রুটি মা-বাবার চোখে ধরা পড়ে না। অভিভাবকরা এসব ব্যাপারে আগের মত সচেতন নন, তারা কেবল অর্থের পেছনে ছুটছেন। ধর্ম-কর্ম, নীতি-নৈতিকতা গৌণ হয়ে গেছে। নিজেদের ব্যবসা, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও পদোন্নতির চিন্তায় ব্যস্ত। সন্তানদের সময় দেওয়ার সময় নেই, সন্তানও তাই কথা শুনছে না।
বখাটেদের সুপথে ফেরানোর জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিজ্ঞ, দেশ ও মানবপ্রেমিক চিন্তক-গবেষকদের পরামর্শ নিয়ে কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক, সাংবাদিক, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এলাকায় এলাকায় প্রতিরোধ কমিটি করতে হবে। এ জন্য সুধীসমাজ, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে।
এর জন্য সামাজিক ঐক্যমতের সঙ্গে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা চালু করতে হবে। আমরা সভ্যতার মুখোশ পরলেও প্রকৃত অর্থে সভ্য না। জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিক দিয়ে বিশ্ব অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করলেও এখনো কিছু কিছু নৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা মানব সমাজকে পীড়া দেয়। এর একটি হচ্ছে ইন্টারনেট। যা সমগ্র পৃথিবীকে আমাদের হাতের মুঠোই এনে দিয়েছে। ইন্টারনেটে অনেক ভাল দিক রয়েছে, যা ব্যবহারের ফলে আমাদের জানার পরিধি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এর খারাপ দিক মোটেই উপেক্ষা করার মত নয়। পর্নোগ্রাফি তেমনই একটি খারাপ দিক যা শিশুসহ যুবক-যুবতীদের ঠেলে দিচ্ছে ভয়াবহ বিকৃতির দিকে। অশ্লীল ভিডিও দেখার ফলে একজন তরুণ হয়ে উঠছে সেক্স অপরাধী। এতে তরুণ-তরুণীদের স্বাভাবিক কর্মতৎপরতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
ল্যাপটপ বা কম্পিউটার নিয়ে আমাদের ছেলে-মেয়েদের গভীর মনোনিবেশ দেখে মনে হতেই পারে ওরা প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে। জ্ঞান অন্বেষণ করছে। যা খুবই ভাল ব্যাপার। প্রযুক্তি সুফলের পাশাপাশি কুফল যে কত মারাত্মক যার প্রমাণ মেলে একটু গভীরভাবে ঐসব ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও মোবাইলের উপর চোখ রাখলে। ভাবলেও শিউরে উঠতে হবে। সব পর্দায় ভাসছে পর্নোগ্রাফি।
সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে পিতা-মাতাকে। আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় অব্যস্থাপনা বখাটেপনার জন্য দায়ী। নারীদেরও উচিত পোশাকে রক্ষণশীল হওয়া। এখন ফ্যাশনের নামে মেয়েদের পুরুষদের মত প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জি, টি-শার্ট পরানো হচ্ছে এবং মেয়েদের পোশাক থেকে ওড়না দূর করে দেওয়া হয়েছে, যা তাদের বুক ঢাকার জন্য ব্যবহার করা উচিত ছিল। নিজেদের রূপ-সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে। উঠতি মেয়েরা রূপান্তরিত হয়ে জৈবিক কামনা ও যৌনতার খোরাকে রূপ নেয়। নারী স্বাধীনতার নামে নারীকে আজ শুধু পণ্য নয়, পণ্যের পণ্য করা হচ্ছে। নারীকে মডেল, ভোগ্যপণ্য, কলগার্লের সঙ্গে আপনহারা-বাঁধনহারা করার প্রচেষ্টা চলছে। পুঁজিবাদীরা পণ্য বিক্রি ও ব্যবসায় জৌলস বৃদ্ধির জন্য নারীদের অনুগত পুতুল বানাচ্ছে। পারিবারিক বন্ধনকে ধ্বংস করে দিয়ে তারা নারীদের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ক্রেতা আকৃষ্ট করার মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলছে। শুধু স্মার্ট ও সুন্দরী নারীদের কর্মক্ষেত্রে নিয়োগের আবেদন করা হয়। বিশেষত নারীকে পণ্য করে বাজারে তোলার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে এটাও নারী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপ, নারী ধর্ষণ, নারীর শ্লীতাহানির অন্যতম কারণ। দেখা যায় একটা টুথপেস্ট, গামছা বা লুঙ্গির বিজ্ঞাপনেও নারীকে খোলামেলাভাবে নাচানো হয়। পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারীকে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে ব্যবহার, ইন্টারনেট ও গণমাধ্যমে নারীকে যৌন আবেদনময়ী করে উপস্থাপন নারীর যৌন হয়রানিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন