স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং বাংলাদেশ
শাহরিয়ার কবীর
জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক, এটা কোনো কালেই ঐতিহাসিক সত্য ছিল না। আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র সেটাই, যেটা ১০ই এপ্রিল মুজিব নগর থেকে ঘোষণা করা হয়। তাজউদ্দিন আহমদ আর সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে আমাদের যে প্রথম সরকার তারা এই ঘোষণা পত্র দিয়েছিলেন। এখানে বাংলাদেশের নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরা স্বাধীনতার ঘোষণা করেছে। বঙ্গবন্ধু ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন। এই জন প্রতিনিধিরা কিভাবে সেই ঘোষণা পত্রে অনুমোদন দিয়েছিলেন। ২৬শে মার্চ থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আতœপ্রকাশ লাভ করে। আপনি যদি ১০ই এপ্রিলের ঘোষণা পত্র না মানেন, তাহলে কিন্তু বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকে না। এর বলেই কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আর্ন্তজাতিক আইনে বৈধতা পেয়েছে। না হলে কিন্তু এটি একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী লড়াই হতো। আর্ন্তজাতিক আদালতে স্বীকৃতি পেতো না । কোনো স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে হলে তার একটি আন্তর্জাতিক আদালতে বৈধতার বিষয় আছে।
আন্তর্জাতিক আদালত বলে, কে কোন প্রেক্ষিতে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারে। এই নিয়ে একটা মামলা হয়েছিল ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক আদালতে বসনিয়ার বিষয়ে। বসনিয়া যখন একতরফা স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়, সার্বিয়া আন্তর্জাতিক আদালতে কেস করে দিলো। রায় হয়েছিল বসনিয়ার পক্ষে। আইন বলে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারে জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধি আর জাতির অবিসংবাদিত নেতা। সার্বিয়ার যে অভিযোগ ছিল, সেটা নাকচ করে দেয় আন্তর্জাতিক আদালত। আমাদের ১০ই এপ্রিলের ঘোষণাপত্রে আছে বাংলাদেশের বৈধতা। এটা না মানলে বাংলাদেশের পৃথক অস্তিত্ব থাকে না। বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায়। যারা বলেন, বঙ্গবন্ধু নয় অন্য কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছে, তারা অন্য উদ্দেশ্যে বলেন। কে বলেছে, কি বলেছে, সেটা তো পরের বিষয়, তার ঘোষণা করার এখতিয়ার ছিল কি-না, একজন পাকিস্তান আর্মির মেজরের? বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া যাবে না। কারণ, বঙ্গবন্ধু জাতির অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন। জনপ্রতিনিধি ছিলেন । সংখ্যাগরিষ্ট দলের নেতা ছিলেন। এ বিষয় অগ্রাহ্য করলে, অস্বীকার করলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে না। এটা বিএনপিকে বুঝতে হবে, বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানাতে চান কি-না বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাপত্রকে অস্বীকার করে? বিএনপিকে নির্বাচনে আনার কৌশল এটা হতে পারে। সিইসি এরশাদেরও তো অনেক প্রশংসা করেছেন। প্রশংসা করলেই তো এরশাদ বৈধ হয়ে যায় না। এরশাদের দুষ্কর্মগুলো বৈধতা পায় না। ইতিহাসের সত্য কখনো মিথ্যা হয়ে যাবে না। ইতিহাসের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা জড়িত। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দ্বিতীয় পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল। বাংলাদেশের সংবিধান মুছে ফেলেছিল। চেষ্টা অনেক করেছিল। কিন্তু সেটা সম্ভব হয় নাই।
পরিচিতি: সভাপতি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি
মতামত গ্রহণ: সানিম আহমেদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান