জন্মসনদ প্রদানের বর্তমান নীতিমালা পরিবর্তন জরুরি
খুশি কবীর
ঢাকার বেশির ভাগ বাসিন্দারই নিজেদের জায়গা-জমি বা ফ্লাট কিছুই নেই। কিন্ত তারা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় বসবাস করছেন, তাহলে কি তারা ঢাকার বাসিন্দা নয়? একটা মানুষ যেখানে জন্মগ্রহণ করবে, সেখান থেকেই সে জন্মসনদ পাবে। এটি একটি আশ্চর্যবোধক কথা যে, জন্মসনদ পেতে হলে ঢাকায় সবার বাড়ি থাকতে হবে, ফ্লাট থাকতে হবে। এটা কোনো কথা হলো? ঢাকায় এতো জায়গা কোথায় সবার বাড়ি করার? যারা ঢাকায় থাকে, ঢাকায় জন্মগ্রহণ করে, এদের মধ্যে যাদের বাড়ি নেই, তারা কি আকাশে উড়ে যাবে? এধরনের ভাবনা তাদের মাথায় কিভাবে আসে আমি ভেবে পাই না! এগুলো আজগুবি ভাবনা। এ ধরনের নীতিমালা সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করে। এগুলো মানুষের অসীম ভুগান্তির কারণ ছাড়া আর কিছুই না। এটা কোনো দেশেই নেই, আমাদের এখানেও হতে পারে না। আমার ঢাকার বাইরে যেখানে জন্ম, সেখান থেকেই জন্মসনদ নিয়েছি। আবার আমার মেয়ের ঢাকায় জন্ম সেও ঢাকা থেকে নিয়েছে। আবার দেখুন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা কিন্তু এক জায়গায় চাকরি করতে পারে না। তাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং হয়। তাহলে তাদের সন্তানেরা কোথা থেকে জন্মসনদ গ্রহণ করবে? অবশ্যই যার যেখানে জন্ম সেখান থেকেই তার জন্মসনদ পাওয়া উচিত। এটার সাথে সম্পত্তি থাকা বা না থাকার কোনো সর্ম্পক থাকতে পারে না। ওনারা যদি বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ যাচ্ছে।
সেখানে গিয়ে তারা নানা রকম অপরাধ মূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। তাহলে আমি বলব, রোহিঙ্গারা কিভাবে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ যায়? এটা পাসপোর্ট অফিসের গাফিলতি ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা শুধুমাত্র জন্মসনদ দিয়েতো আর পাসপোর্ট বানানো সম্ভব হয় না। এখানে আরও অনেক কাগজ-পত্রের দরকার হয়। তারপর পুলিশ আবেদন কারীর স্থায়ী এবং অস্থায়ী দুই ঠিকানায় স্ব-শরীরে খোঁজ নিয়েই বা তদন্ত করেই পাসপোর্ট প্রদান করে। তো আমার কাছে মনে হয়, এসব কথা একদমই অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন। মিয়ানমার সরকার যেমন বলছে, রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর নেই, তাই তারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়। ঠিক তেমনি বাংলাদেশ সরকার বলছে, যাদের বাড়ি বা ফ্লাট নেই তারা সেখানকার স্থায়ি বাসিন্দা নয়। তাই তারা সেই জায়গায় জন্মগ্রহণ করলেও সেখান থেকে জন্মসনদ নিতে পারবে না। এক্ষেত্রে আমি মনে করি, যে নীতিমালায় জনগণের জন্য কোনো সুফল নেই, সে নীতিমালা পরিবর্তন জরুরি।
পরিচিতি : মানবাধিকার কর্মী
মতামত গ্রহণ : লিয়ন মীর
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ