ব্যাংকিং খাতে দ্বৈত শাসন চলছে, ব্যাংকিং ডিভিশন তুলে দেওয়া প্রয়োজন
সাক্ষাতকারে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
জাফর আহমদ : ব্যাংকিং খাতে দ্বৈত শাসন চলছে। এক বাণিজ্যিক ব্যাংকের একজন এমডিকে পুন:নিয়োগ না দেওয়ার পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক মত দিয়েছিল। ব্যাংকিং ডিভিশন তাকে ওই পদে পুন:নিয়োগ দিলো। এসব ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ব্যাংকিং ডিভিশনটা একেবার উঠিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সমস্ত দায়িত্ব দেওয়া দরকার। যাতে ব্যাংকিং খাতে কোন অঘটন ঘটলে বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়ি করা যায়। গত মঙ্গলবার এক সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের পর ব্যাংকিং ডিভিশন (ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ) করা হয়। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে পরিচালক নিয়োগ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের সাথে পরামর্শ করবে। বা সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে পরামর্শ করবে। কিন্তু এখানে দ্বৈত শাসনের মত অবস্থা চলছে। ব্যাংকিং ডিভিশন যে নির্দেশনা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা মানতে বাধ্য হচ্ছে। অগ্রণী ব্যাংকের এমডি নিয়োগ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক বললো এক্সটেনশন দেওয়া যাবে না। ব্যাংকিং ডিভিশন তাকে ওই পদে পুন:নিয়োগ দিলো। ব্যাংকিং ডিভিশন নিয়োগ দেওয়ার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়ি করা গেল না।
বাংলাদেশ ব্যাংক যদি অটোনমি প্রয়োগ না করে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি উপলব্ধি না করে পেশাদারিত্বের জায়গায় হস্তক্ষেপ করে তা হলে দীর্ঘমেয়াদে কারও সুবিধা হয়না। এখানে সরকারের সদিচ্ছা দরকার। সদিচ্ছার অভাবে খেলাপি ঋণ কমছে না, দুর্নীতি কমছে না, মানি লন্ডারিং কমছে না এবং অর্থপাচার কমছে না। সবগুলো সরকারের সচ্ছিার অভাবে হচ্ছে। কারা করছে, কিভাবে করছে-সরকার একেবারে জানে না, তা নয়। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন এ্যাকশন নেই। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যা বলছে তাই করছে। ম্যানেজমেন্ট আছে কিন্তু তাদের সৎ সাহস, ইচ্ছা ও সংকল্প নেই।
আমার সময়ে নতুন ব্যাংক দেওয়ার প্রেসার ছিল। আমি বলেছি ফিজিবিলিটি স্টাডি করবো। এত ব্যাংক দেখার ক্যাপাবিলিটি নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের। এটা সেন্ট্রাল ব্যাংকের কাজ, সেন্ট্রাল ব্যাংকের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। কিন্তু সর্বশেষ দেখলাম ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হলো। প্রথমে বলা হলো দেওয়া হবে না। তারপর ৯ টি ব্যাংককে অনুমোদন দেওয়া হলো।
বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্ত অবস্থান নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে কোন কম্প্রোমাইজ করা চলবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এতকিছুর পরেও সেন্ট্রাল ব্যাংকের একটি এক্সট্রা ক্ষমতা আছে। এ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হয়। সেন্ট্রাল ব্যাংকের অটোনমি আছে, অটোনমি টু আর্ন। অর্থমন্ত্রী বলছেন আর কত অটোনমি দেবো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে পাওয়ার আছে বাংলাদেশের আর কোন নিয়ন্ত্রক সংস্থার এত ক্ষমতা নেই। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব হোসেন