সাক্ষাৎকারে ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বিএনপিকে নির্বাচনে সম্পৃক্ত করাই বোধ হয় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের লক্ষ্য ছিল
আশিক রহমান : বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপি শুরু থেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেছিল। এবং যার পরিপ্রেক্ষিতে এমন একটি আশঙ্কা ছিল, বিএনপি আসলেই নির্বাচন কমিশন আয়োজিত সংলাপে অংশগ্রহণ করবে কিনা। কিন্তু দেখা গেল বিএনপি সেই নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশগ্রহণ করেছে। সামগ্রিক বিচারে এটি একটি ইতিবাচক প্রাপ্তি। এর সঙ্গে যুক্ত হলো প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিএনপি তোষণমূলক কিছু মন্তব্য। যে মন্তব্যে বিএনপি যথেষ্ট আত্মতৃপ্তিবোধ করেছে এই জন্য যে, তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে যথেষ্ট প্রশংসা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে উল্লেখ্য যে সাংবিধানিক পদে থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন না। হতে পারে তার এটা একটা কৌশল যে, বিএনপি অনেকটা সংলাপে আসার ক্ষেত্রে রাজি না হওয়ার মতো একটি পক্ষ। তাদেরকে (বিএনপিকে) তোষণ করে যদি নির্বাচনের মূল স্রোতে সম্পৃক্ত করা যায়, সেটিই বোধহয় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের লক্ষ্য ছিল। তবুও সামগ্রিক বিচারে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুপারিশ শুনবেন, বিবেচনা করবেন, যতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য তা তিনি বাস্তবায়ন করবেন। তার মূল্য লক্ষ্যটি হচ্ছে যেকোনো মূল্যে একটি অংশগ্রহণমূলক একটি সুষ্ঠু নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়াÑ আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিএনপি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে ২০ দফা দাবি তুলে ধরেছে। এই দাবিগুলোর মধ্যে অভিনবত্ব বলতে কিছু নেই। বিএনপি হরহামেশাই যে কথাগুলো বলে সংলাপেও তা বলেছে। তবে এখানে এমন কিছু প্রস্তাব রয়েছে যা নির্বাচন কমিশনের আয়ত্বের বাইরে। যেমন ধরা যাক, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। যে প্রক্রিয়ার উপরে নির্বাচন কমিশনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, এটা আমরা জানি। আরেকটি প্রস্তাব এসেছে যে, নির্বাচনের সময় ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে সেনা মোতায়েন করা। সেনা মোতায়েনের ব্যাপারটা নির্বাচন কমিশনের বিবেচনাধীন এবং আয়ত্বের অধীন। যদি নির্বাচন কমিশন মনে করে যে নির্বাচনে সামগ্রিক স্বার্থে সেনা মোতায়েন করা দরকার তাহলে সেটি করতে পারে। কিন্তু আমার কথা একটু অন্যরকম।
তিনি বলেন, আমরা জানি সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে যতদূর রাখা যায় ততই ভালো। বাংলাদেশে সেনা শাসনের তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। নব্বইয়ের পর থেকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী যথেষ্ট পেশাদারিত্ব অর্জন করেছে। এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে, সেনাবাহিনীও চায় না রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে। সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারটা সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে রেখে দেওয়া যেতে পারে। অর্থ্যাৎ স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রাখা যেতে পারে। প্রয়োজন বোধে সেনা মোতায়েন করা যেতে পারে, নইলে নয়। কিন্তু শুরু থেকেই সেনা মোতায়েনের ব্যাপারটি নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করা দরকার।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট এই রাজনৈতিক ভাষ্যকার বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিগত যে পার্থক্য রয়েছে তা নিরসন না হলে কাক্সিক্ষত মানের নির্বাচন সুদূর পরাহত হবে। সেক্ষেত্রে শুধু নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেই সংলাপ করলে হবে নাÑ রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে যেসব বড় দল রয়েছে তাদের ভেতরেও একটা সংলাপ হওয়া দরকার। সংলাপের মধ্যে দিয়ে সংঘাত এড়িয়ে যাওয়ার মতো কোনো পথ তৈরি করা যায় কিনা সেটিও ভেবে দেখতে হবে। যদি রাজনৈতিক দলগুলো ভেতর থেকে প্রস্তুত হয়ে উঠে আপোস ফরমুলার মধ্যে দিয়ে যেকোনোভাবেই হোক না কেন, তাহলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সম্ভব হবে কাক্সিক্ষত মানের নির্বাচন আয়োজন করা। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দল বা নাগরিক সমাজের আলোচনার মধ্যে দিয়ে কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয়।