বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের বিপুল সংবর্ধনা, মতবিরোধ আছে তবে মুরুব্বিদের সম্মান দিতে হবে লন্ডনে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া
শাহানুজ্জামান টিটু, কিরণ সেখ ও মাঈন উদ্দিন আরিফ : লন্ডনে চিকিৎসা শেষে প্রায় ৯৩ দিন পর দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল বিকাল ৫টা ০৫ মিনিটে তাকে বহরকারী বিমানটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম তাকে স্বাগত জানান। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার দেহরক্ষী মাসুদ রানা ও গুলশান কার্যালয়ের কর্মচারী জসিম উদ্দিন।
এছাড়া বাইরে অপেক্ষমান দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানান। তবে ক্রিম রঙের শাড়ি পরিহিতা খালেদা জিয়া পায়ে নয় হুইল চেয়ারে করে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে বের হয়ে তার জন্য অপেক্ষমান গাড়িতে ওঠেন। নেতাকর্মী দ্বারা পরিবেষ্টিত খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরটি ধীরগতিতে বিমানবন্দর এলাকা ছেড়ে গুলশান নিজ বাসভবনে উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাস্তার দুপাশে অপেক্ষমান নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়াকে হাত নেড়ে, ফুল ছিটিয়ে, নানা ধরনের পোস্টার-ফেস্টুন হাতে শ্লোগানে শ্লোগানে তাদের প্রিয় নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানায়। হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া গাড়ির ভেতর থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে জবাব দেন।
এর আগে তিনি গত রাতে বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ১৫ মিনিট লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হন। খালেদা জিয়াকে বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বিমানটি (ইকে-৫৮৬) হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। দুবাইয়ের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় খালেদা জিয়াকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করে। সেখানে ৩ ঘণ্টা বিরতির পর স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ( বাংলাদেশ সময় সাড়ে ১২টায়) ঢাকার উদ্দেশ্যে দুবাই ছাড়েন খালেদা জিয়া।
এদিকে বিমানে ওঠার আগে হিথ্রো বিমানবন্দরে ভিআইপি টার্মিনাল থেকে [জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থঐষশ৪৯৬০৮৫৫৮১টেলি-কনফারেন্সের [জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থঐষশ৪৯৬০৮৫৫৮১মাধ্যমে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়া। দলের ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে দলের ঐক্য ধরে রাখা। দলের মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে। মুরুব্বিদের সম্মান দিতে হবে। তরুণদের প্রাধান্য দিতে হবে। অবশ্যই সিনিয়রদেরও প্রয়োজন আছে। তিনি বলেন, তরুণদের কাজে লাগাতে চেষ্টা করবেন। এখানে যারা ছাত্র আছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। তারা রাজনীতি না করলেও দেশে গিয়ে ভোট দেবে। এসময় নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরের বাইরে হ্যান্ডমাইক নিয়ে বিএনপি প্রধানের বক্তব্য প্রচার করেন। তারেক রহমানের খোঁজ-খবর রাখাসহ তার পাশে থাকতে লন্ডন বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। এসময় তিনি দলের ঐক্যের ওপর জোর দেন। খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা দোয়া চেয়েছেন। সবার জন্য দোয়া থাকবে। কিন্তু আমি আপনাদের সঙ্গে মিটিং করতে পারিনি। আপ্যায়ন করাতে চেয়েছেন, আমি অংশ নিতে পারিনি। আমি এসেছিলাম চিকিৎসার জন্য। গতকালও (মঙ্গলবার) ডাক্তারের কাছে গিয়েছি। বিএনপি প্রধান বলেন, আপনারা যারা প্রবাসে আছেন, তারা দেশে ভোটার হতে পারবেন। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে হতে পারবেন।
বক্তব্যের শেষ দিকে খালেদা জিয়া বলেন, আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে, ভবিষ্যতে ইনশাল্লাহ আপনাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করব। মিটিং করব। ভালোভাবে যেন দেশে পৌঁছতে পারি, দোয়া করবেন। আপনাদের ভাইয়ার (তারেক রহমান) সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, তার খেয়াল রাখবেন।
লন্ডন মহানগর বিএনপির প্রচার সম্পাদক মাইনুল ইসলামের বরাত দিয়ে শাসদুদ্দীন দিদার জানান, বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ভীড়ের কারণে, নিরাপত্তার কারণে সেখানকার পুলিশ নেতাকর্মীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে দেয়নি। প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুলাই লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন খালেদা জিয়া। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী