যুদ্ধাপরাধী সাকার পরিবারের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি একান্ত বৈঠক করেছিলেন : বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী
জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না : যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা আপিল বিভাগে চলমান থাকাবস্থায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হা আসামির পরিবারের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। সাকা চৌধুরীকে বাঁচানোর চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের জন্যে সেটা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি। আমি তখন ওই বেঞ্চের একজন সদস্য ছিলাম। সোমবার সুপ্রিমকোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক একান্ত সাক্ষাৎকারে এই প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন।
বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক বলেন, ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর যখন যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের আপিল শুনানী চলছিলো। শুনানী চলার এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, একাত্তরে তিনিও শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। এবং এই কথাটি তিনি দুই বার বলেছেন। তিনি শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলেই তিনি ক্ষান্ত হননি, ওই সময় তিনি আরো বলেন, তিনি পাকিস্তানিদের জন্যে কাজ করেছেন। তখন আমি ওই বেঞ্চের একজন সদস্য ছিলাম। এবং আমি বার বার তার দিকে তাকালাম। এর পরের দিন বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপাও হয়েছিলো। ওই দিন থেকেই মূলত প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে আমার দূরত্ব তৈরী হয়েছিলো।
এক প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক বলেন, আমি ওই দিনই জানলাম আজকের এই প্রধান বিচারপতি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, গণমানুষের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। তখনও তিনি প্রধান বিচারপতি হননি। এরপর যখন তিনি প্রধান বিচারপতি হলেন। বঙ্গভবন থেকে শপথ নিয়ে এসেই প্রথমে তিনি আমাকে ১ নম্বর কোর্ট থেকে ২ নম্বর কোর্টে পাঠিয়ে দিলেন। আমি সেটা জেনে তার কাছে যাই। তাকে বলি, আমার সাথে কোন রকম আলাপ না করে কেন আমাকে কোর্ট পরিবর্তন করে দেয়া হলো? জবাবে তিনি বলেন, সাকা চৌধুরীর পরিবার চায় না সাকার মামলায় ওই বেঞ্চে আপনি থাকেন। এমনকি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ নাকি প্রধান বিচারপতির হাতে পায়ে ধরেছেন যাতে ওই বেঞ্চে তাকে না রাখা হয়।
এমন সময় প্রধান বিচারপতিকে তিনি বলেন, বেঞ্চ গঠন করার এখতিয়ার আপনার। আপনি বেঞ্চ গঠন করবেন। আসামি পক্ষের কথা শুনে কেন আপনি বেঞ্চ গঠন করবেন। এটা তো মারাতœক অসধাচারণ। তখন তিনি চুপ হয়ে গেলেন। কোন জবাব দিতে পারেননি। এরপর থেকেই তার সাথে আমার দূরত্ব বাড়তে থাকে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির এসব ঘটনা সাংবাদিক স্বদেশ রায় দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় লিখলেন। এরপর থেকে প্রধান বিচারপতি সাকার পরিবারের সাথে দেখা করতে পারেনা। তখন প্রধান বিচারপতি স্বদেশ রায়ের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন। কিন্তু সাংবাদিক স্বদেশ রায় আতœসমর্পণ না করে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে সমস্ত তথ্য প্রমানাদি আদালতে পেশ করেন। তখন কোন উপায় না পেয়ে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ্য আদালতে স্বীকার করলেন তিনি সাকার পরিবারের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। পরের দিন দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় বড় করে ছাপা হয়েছিলো ওই রিপোর্ট।
তিনি আরো জানান, এই সেই প্রধান বিচারপতি যিনি সাকা চৌধুরীর মামলার রায়ও লিখেছেন। এরপর থেকে প্রধান বিচারপতি আমার প্রতি বৈরী আচরণ শুরু করেন। আমার রুমে তালা দিলেন। একজন জাজ অবসরে গেলেও অনেক দিন পর্যন্ত কাজ থেকে যায়। কিন্তু তিনি আমার রুমে তালা দিয়েই ক্ষান্ত হননি। আমার পেনশন বন্ধ করে দেন। আর তাতে আমার ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব হোসেন