পরকালে নারীরা যে ৬টি কারণে শাস্তি পাবেন
লুবাবা জান্নাত হুমায়রা
রাসুল (সা.) বলেনÑ‘যে নারী পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়বে এবং রমজানের রোজা রাখবে, (পর্দা রক্ষা করে এবং ব্যভিচার থেকে বিরত থেকে) নিজের গুপ্তস্থানকে হেফাজত করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরোজা খুলে দেয়া হবে। যে দরোজা দিয়ে ইচ্ছে করবে, প্রবেশ করতে পারবে।’ (তিরমিজি ও তাবারানি)। এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, মেয়েদের জন্য বেহেশতগমন খুবই সহজ। তবে অন্য এক হাদিসে বর্ণিত আছেÑএকবার ঈদুল ফিতরের দিন রাসুল (সা.) ঈদগাহে গিয়ে উপস্থিত নারীদেরকে লক্ষ্য করে বললেনÑ‘হে নারীসম্প্রদায়, দান-খয়রাত করো। কেননা আমায় অবগত করানো হয়েছে, দোজখের অধিকাংশ অধিবাসী তোমাদের নারী সম্প্রদায়ই হবে।’ এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী হবে নারীজাতি। অথচ প্রথম হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, মেয়েদের জন্য জান্নাতে গমন খুবই সহজ।
কিন্তু তবুও কেনো নারীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ জাহান্নামে যাবে? এ প্রশ্নের উত্তরে রাসুল (সা.) বিভিন্ন হাদিসে নারীজাতির এ বিপর্যয়ের কারণ নির্ণয় এবং তার প্রতিকার বর্ণনা করেছেন। কয়েকটি কারণ এইÑআল্লামা হাফেজ শিহাব উদ্দিন জাহাবি (রহ.) তার প্রসিদ্ধ কিতাব ‘আল কাবায়ের’-এর একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন, যাতে নারী শাস্তির ছয়টি দিক বর্ণিত হয়েছে। হজরত আলী (রা.) ও হজরত ফাতেমা (রা.) একবার রাসুল (সা.)-এর কাছে সৌজন্য সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে এলেন। রাসুল (সা.)-কে ক্রন্দনরত অবস্থায় তারা দেখতে পেলেন। কান্না তাদের ওপর বিস্তার লাভ করলো। এরপর হজরত আলী (রা.) কান্নার কারণ জানতে চাইলে রাসুল (সা.) বললেনÑ‘মেরাজের রাতে আমি উম্মতের নারীদেরকে জাহান্নামে বিভিন্নধরনের ভয়ংকর ও কঠিন শাস্তিতে লিপ্ত দেখেছি, তা স্মরণ করে কাঁদছি।’ নারীশাস্তির ছয়টি দিক অবহিত হওয়ার পর নবীকন্যা হজরত ফাতেমা (রা.) এ শাস্তির কারণ জানতে চেয়ে আরজ করলেনÑ‘আব্বাজান, নারীদের এই ভয়াবহ শাস্তিভোগের কারণ কি?’ উত্তরে মহানবী (সা.) ইরশাদ করলেন,
প্রথম কারণ
মেরাজের রাতে যে নারীকে নিজের মাথার চুল দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় সাজা ভোগ করতে দেখেছি, তার সে শাস্তির কারণ হলো, চলার পথে সে পরপুরুষ থেকে নিজের চুলকে ঢেকে রাখতো না। নগ্নমাথায় পরপুরুষকে দেখানোর জন্য চুল ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াতো। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে নারীদেরকে মাথা, কাঁধ ও বুক মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায়, নারীরা মাথার চুলকে কতো বাহারি প্রসাধনীতে রূপসজ্জায় সাজিয়ে নানা ঢংয়ে রাস্তায় বেপর্দাভাবে চলাফেরা করছে। অথচ পর্দাসহ চলা, চুল ঢেকে রাখা নারীর ওপর ফরজ।
দ্বিতীয় কারণ
যেসব নারীকে সে রাতে নিজের জিহ্বা দ্বারা ঝুলন্ত অবস্থায় জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে দেখা গেছে, তাদের ঐ শাস্তির কারণ হলো, কথাবার্তায় তারা স্বামীকে কষ্ট দিতো; তাদের জবান থেকে শাশুড়ি, আত্মীয়-স্বজন, এমনকি প্রতিবেশী পর্যন্ত নিরাপদ থাকতো না। অনেক নারী এমন আছেন, যারা নামাজ-কালামে খুবই পাকা; কিন্তু মুখের বচন বিষের মতো। এ শ্রেণির নারীরা নামাজি হওয়াসত্ত্বেও কুরুচিপূর্ণ অশ্লীলভাষী হওয়ায় জাহান্নামে কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেনÑ‘প্রকৃত মুসলমান ঐ ব্যক্তি, যার হাত মুখ এবং আচরণ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (সহিহ মুসলিম)।
তৃতীয় কারণ
মহানবী (সা.) ঐ রাতে যে নারীকে নিজের স্তনে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন, তার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনÑ‘সে নারী ছিলো বিবাহিতা; এরপরও তার অবৈধ সম্পর্ক ছিলো পরপুরুষের সঙ্গে।’ আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে লজ্জাস্থান হেফাজতকারী নারীকে জান্নাতি বলে ঘোষণা করেছেন। (সুরা মুমিনুন : ৫)। অন্য আয়াতে জিনাকারী নারী এবং জিনার পরিবেশ সৃষ্টিকারী নারী সম্পর্কে কঠোর শাস্তির কথা ঘোষণা করেছেন। (সুরা নুর : ২)। চলমান বিশ্বে নারী কেলেঙ্কারির নামে অনেক কিছুই ঘটে চলছে; স্বামীর অনুপস্থিতিতে দেবর ও অন্যের সঙ্গে অসংকোচে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে লজ্জাকে বিসর্জন দিয়ে ধীরে ধীরে অবৈধ সম্পর্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছে নারী। এসব লজ্জাহীনতার ফসল।
চতুর্থ কারণ
মহানবী (সা.) ইরশাদ করেনÑ‘জাহান্নামে নিজের দু-পা বুকে এবং দু-হাত কপালে স্থাপিত অবস্থায় সাজাপ্রাপ্তা নারীরা দুনিয়ায় ফরজ গোসল এবং ঋতুবতী হওয়ার পরবর্তী পবিত্রতা অর্জনে উদাসীন ছিলো। নামাজ যথারীতি পালন করা তো দূরের কথা, নামাজ বা অন্যান্য ইবাদত নিয়ে উপহাস করতো।’ গোসল ফরজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা করে নেওয়া উত্তম। অহেতুক অলসতা করে বিলম্ব করার দ্বারা কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং এটা হারাম।
অনুরূপভাবে ঋতুবতী নারীর ঋতু¯্রাব বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গোসল করে নেওয়া উচিত। আজকাল নারীদের মাঝে এ নিয়ে বেশ উদাসীন ভাব লক্ষ্য করা যায়। অনেক আগেই ঋতু¯্রাব বন্ধ হওয়াসত্ত্বেও গোসল না করে বসে থাকে। নামাজের ওয়াক্ত অবধি পেরোয়, তবু।
নামাজ নিয়ে বিদ্রুপ করা নারীশাস্তির অন্যতম কারণ। আজকের সমাজে দেখা যায়, নামাজ মোটেই গুরুত্ব দিয়ে পড়ে না। নামাজের ওয়াক্ত পেরিয়ে যায়, তাদের কোনো খবর থাকে না। কোথাও বেড়াতে গেলে তো কথাই নেই, প্রসাধনী নষ্ট হওয়ার ভয়ে নামাজের কাছেই যায় না। অথচ কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজেরই হিসেব হবে। (তিরমিজি)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘নামাজ হচ্ছে মুসলিম-অমুসলিমের মাঝে পার্থক্যকারী।’(সহিহ বোখারি)।
পঞ্চম কারণ
পরনিন্দা ও মিথ্যা বলা। মুখাকৃতি শুঁয়োর এবং শরীরের বাকী অংশ গাধায় রূপান্তরিত আর অসংখ্য সাপ-বিচ্ছুবেষ্টিত অবস্থায় শাস্তিভোগকারী নারীর কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেনÑ‘এ নারী পরনিন্দা ও মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত ছিলো।’
অথচ পরনিন্দা ও মিথ্যা বলা মহাপাপ। পবিত্র কোরআনে পরনিন্দাকে মৃতভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
ষষ্ঠ কারণ
হিংসা ও খোটা দেওয়া। রাসুল (সা.) জাহান্নামের যে নারীকে মুখচ্ছবি কুকুর আকৃতির ও তার মুখে আগুন ঢুকে মলদ্বার দিয়ে বেরোতে দেখেছেন, সে হলো হিংসুক ও খোঁটাপ্রদানকারী।