সজাগ থাকুন, শিশুকে ব্রংকিওলাইটিস থেকে রক্ষা করুন
বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। এক সময় এই ষড় ঋতুর প্রভাব বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ঋতু বৈচিত্রের অন্যতম ধারক ও বাহক ছিল। কালের পরিক্রমায় প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে হতে এখন এই দেশে ষড় ঋতুর প্রভাব আগের মত পরিলক্ষিত হয় না। শীত এবং গ্রীষ্মের প্রভাব খুব বেশি আমাদের ঋতু বৈচিত্রে দেখা যায়। শীত ও বসন্তের প্রথম দিকে শিশুর ব্রংকিওলাইটিস রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিলেও শহরাঞ্চলে পুরো বারো মাসই শিশুরা শ্বাস জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শ্বাস জনিত রোগের মধ্যে অল্প বয়সী শিশুদের ব্রংকিওলাইটিস এর প্রার্দুভাব অতি মাত্রায় বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হলো অতিমাত্রায় শহরের বায়ু দূষণ। ছোট শিশুরা পিতামাতা বা আত্বীয় স্বজনের সাথে বাহিরে কোথাও বেড়াতে গেলেই বছরের সব ঋতুতেই শ্বাসকষ্টের অসুখে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। ব্রংকিওলাইটিস শিশুর জন্মের পর থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত যে কোনো সময়ে হতে পারে। তবে ২ থেকে ৬ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। ব্রংকিওলাইটিস রোগের লক্ষণগুলো অনেকাংশেই শিশুর নিউমোনিয়া রোগের সাথে মিলে যায় বলে ব্রংকিওলাইটিসকে অনেকে নিউমোনিয়া ভেবে ভুল করে থাকেন। শিশুর ব্রংকিওলাইটিস সাধারণত কিছু ভাইরাসের সংক্রমনের ফলে হয়ে থাকে। এই সকল ভাইরাসের মধ্যে অন্যতম হলো রেসপাইরেটোরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) এছাড়াও আরও কিছু ভাইরাস যেমন প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, এডিনো ভাইরাস, মেটানিউমো ভাইরাস ও মাইকো প্লাজমা দিয়েও এই অসুখ হয়ে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত বেশির ভাগ শিশুরই ঘরের বাহিরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার একটি তথ্য বাবা মায়ের কাছ থেকে খুঁজে পাওয়া যায়। আক্রান্ত শিশুদের সাধারণত ২-৩ দিনের সর্দি ও কাশি, এরপর হঠাৎ করেই শিশুদের জ্বর এবং মারাত্বক শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এই রোগের ক্ষেত্রে শিশুর জ্বর তেমন বেশি হয় না। অনেক শিশু শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি প্রচুর কান্নাকাটি করে ও খেতে পারে না। কান্নাকাটি শিশুর শ্বাস কষ্টের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেয়। খাওয়ার সময় কাশি দিয়ে অনেকে বমি করে দেয়। শিশুকে কফ ভালভাবে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে শিশুর সামান্য জ্বরসহ দ্রুত শ্বাস থাকে, বুকের পাঁজর অনেক ক্ষেত্রে বসে যায়, কিছু শিশুর ঠোঁট এবং জিব্বহ নীলাভ হতে পারে, বুকে বাঁশির মতো শব্দ হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীর লক্ষণ থেকে ব্রংকিওলাইটিস রোগ নির্ণয় করা যায়। সাধারণত কোনো পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে না, তবে প্রায় একই ধরনের অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত অসুখের সঙ্গে পার্থক্য করার জন্য রক্তের কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট ও বুকের এক্স-রে করার প্রয়োজন হতে পারে।
রোগের শুরুতেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে বেরিভাগ শিশুকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করা যায়। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের ওষুধের সেবনের সাথে সাথে শিশুকে খোলামেলা জায়গাতে রাখতে হবে, ঘনঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে, নাক বন্ধ হয়ে গেলে নরমাল স্যালাইন ব্যবহার করে নাক পরিষ্কার রাখতে হবে। ব্রংকিওলাইটিস একটু দেরি করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে শিশুর জীবন সংকটাপন্ন হয়ে উঠে। এই সকল শিশুকে হাসপাতালে চিকিৎসা করাই বাঞ্চণীয়। শহরের বৈরি পরিবেশ থেকে শিশুর শ্বাসজনিত ব্রংকিওলাইটিস রোগ থেকে শিশুকে বাঁচাতে সর্বাগ্রে পিতা-মাতার সচেতন হওয়া জরুরি
লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা : আশিক রহমান