বিশেষ সাক্ষাৎকারে এফবিসিসিআই পরিচালক খন্দকার রুহুল আমিন দুর্নীতিমুক্ত ও শিল্পবান্ধব বাংলাদেশ চাই
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
যেখানে ছিল ৮০০ কোটি টাকা বাজেট, সেটা এখন হয়ে গেছে ৩০০০ কোটি টাকা। এই যে টাকাটা বেড়ে গেল, এটা আমরা কিভাবে দেব? অন্যদিকে আমরা জানি, সরকারের পক্ষ থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের ৮০ থেকে ১০০ পারসেন্ট বেতন বাড়ানো হয়েছে। তারপরও কেন দুর্নীতি করতে হবে? অথচ এ টাকাটার সামাল দিতে হচ্ছে জনগনকে। যদি ব্যবসায়ীদেরকে তাদের ব্যবসায়িক এবং ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, দুর্নীতি বন্ধ করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ হবে শিল্পবান্ধব। এগিয়ে যাবে অনেকদূর। আমাদের অর্থনীতির সাথে বিশেষ সাক্ষাৎকারে বিশেষ সাক্ষাৎকারে এফবিসিসিআই’র নির্বাচিত পরিচালক খন্দকার রূহুল আমিন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট যেভাবে এগোচ্ছে উন্নয়নের বেশ কিছু অগ্রগতি লক্ষণীয় ও দৃশ্যমান। কিন্তু তার পরেও আরো অনেক উন্নয়ন হতে পারত। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের যে তরুণ জনশক্তি আছে অর্থাৎ ১৮ বছর থেকে ৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত যে সমস্ত ব্যক্তিরা কর্মক্ষম আছে, তা ভারত এতবড় দেশ হওয়া স্বত্তেও সেখানে নেই, ইউরোপের ২০টি দেশে এই পরিমান কর্মক্ষম মানুষ নেই। বাংলাদেশে ৬৫ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষম। এদের ঠিকমত কাজে লাগাতে পারলে আমাদের জিডিপির গ্রোথ ১০ এর উপরে যাবে।
তিনি উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা রাষ্ট্র নায়কের মতোই কাজ করেছেন। যদিও তার সহযোগিরা সেভাবে এগাতে পারছে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ সরকারের অঙ্গীকার ছিল, প্রতিটা ঘর থেকে একজনকে প্রোভাইড করবে তাকে। তিনি খুবই সুন্দর উত্তর দেন। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সেটা করতে পারছে না। পারছে না কারণ, যেভাবে এখানে ইন্ডাষ্ট্রি হওয়ার কথা, ব্যবসা বাণিজ্য বাড়ার কথা, সেটা বাড়ছে না। যেভাবে ফরেন ইনভেষ্টমেন্ট এখানে আসার কথা, আসছে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পুরনো কথা। এখানে যারা যে সেক্টরে আছে তারা সেভাবে সহযোগিতা করছে না। আমি একটা ইন্ডাষ্ট্রি করতে চাই, আমি একটা ভালো কিছু করতে চাইব, সেটার জন্য আমার কাগজ ঠিকমতো আছে কি-না, আমার ট্রেড লাইসেন্স ঠিক আছে কি-না, আমি এখানে সরকারকে সহযোগিতা করতে পারলাম কি-না, এসবসহ নানান প্রশ্ন সামনে আসে। ব্যাংকের ফিন্যান্স তো আমাদের দেবে না। নতুন উদ্যোক্তাদের দেবে না। যারা হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে ঠিকমত টাকা পরিশোধ করবে না, তাদের দেবে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে না পারলে ২০২১ সালে যে আমাদের মধ্যম আয়ের দেশে নেওয়ার কথা ছিল, সে লক্ষ পূরণ হবে না। তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিং সেক্টরে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি চলছে। যারা প্রকৃত ব্যবসায়ী, যারা পরিশ্রম করছেন, যাদের সাথে শিল্পের প্রায় ৮০ পারসেন্ট লোক কাজ করছে, তারা ব্যাংকের সুযোগগুলো থেকে বঞ্চিত। ২০ পারসেন্ট কাজ করছে যাদের সাথে সেসব বড় বড় ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে টাকা ঋণ নিয়ে সময় সময় রি অ্যাডজাস্ট করে। ২০১৪ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যে ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছিল, সেখানে দেখা গিয়েছে, যারা ৫০০ কোটি টাকা লোন নিয়েছে তাদের নিয়ে শিডিউল করেছে। আমাদের মত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দিকে কেউ খেয়াল করে না। সরকারের দৃষ্টি নাই, ব্যাংক কতৃপক্ষেরও দৃষ্টি নাই। আমরা ৮০ পারসেন্ট লোকবল সাথে নিয়ে কাজ করছি। আমি যদি ব্যাংক থেকে ৫ কোটি টাকা পাই, ৫০০ লোককে এখানে প্রোভাইড করতে পারছি। তারা ৫০০০ হাজার কোটি নিয়ে ১০০ লোককেও প্রোভাইড হয় না। যেহেতু আমাদের প্রচুর জনসংখ্যা, প্রচুর কর্মক্ষম ব্যক্তি আছে। প্রতিবছর ২০-২৫ হাজার ছেলেমেয়ে কর্মক্ষেত্রের জন্য বের হচ্ছে। তাদেরকে প্রোভাইড করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকা দরকার ছিল। অথচ তাদের পুরোটাই চলে আসে আমাদের কাছে। আমরা যেভাবে চলতে পারি, সেভাবে হয়ত দিয়ে থাকি। পুরোটা দিতে পারছি না।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ে, প্রত্যেকটা সেক্টরে ঠিকমত কাজ হচ্ছে না, দুর্নীতি হচ্ছে। যদিও আমি বলছি না যে এখনই প্রত্যেকটা দুর্নীতির মূল উৎপাটন করে দেন। সহনশীল পর্যায়ে রাখতে হবে।
সম্পাদনা : আশিক রহমান