একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন অপরিহার্য
মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীর প্রতীক
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল বেলা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশগ্রহণ করে। আমরাও সেনা মোতায়েনের পক্ষে জোড়ালো বক্তব্য উপস্থাপন করেছি। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সংলাপকালে সেনা মোতায়েনের পক্ষে জোড়ালো বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং তাদের ঘনিষ্ঠ দু-চারজন মিত্র সেনা মোতায়েনের বিরোধীতা করেছেন। বিরোধীতা করার পেছনে তাদের কোনো শক্তিশালী যুক্তি এই পর্যন্ত মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের নজরে আসেনি। আমার বলতে কোনো দ্বিধা নেই, বর্তমান সরকারের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ। বর্তমান সরকার নির্বাচনের আগে গ্রামে-গ্রামে জনপদে-জনপদে, মহল্লায়-মহল্লায় এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইবে, যে পরিবেশে বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীগণ, ভোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত ওয়ার্কারগণ যেন ভীত সন্ত্রস্ত্র হয়ে নিজ নিজ এলাকা ত্যাগ করে। আমার আরও বলতে দ্বিধা নেই যে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকারের প্রভাবমুক্ত কোনো সংস্থা এবং সংগঠন নেই, যদি একটি মাত্র সংস্থা ও সংগঠন থাকে বলে কেউ বিশ্বাস করে, সেটি হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আর তাই, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন অপরিহার্য। অতীতে সর্বপ্রকারের নির্বাচনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জড়িত ছিল। বাংলাদেশ সেনাবহিনী যে কোনো প্রকারের জাতীয় দূর্যোগে জনগণের প্রয়োজনে সরকারের হুকুমেই খেদমতে নিয়োজিত হয়। অতএব, এই খেদমতে কেন নিয়োজিত হবে না, তার কোনো জোড়ালো যুক্তি আওয়ামী লীগ দিতে পারে না। এই কারণেই তারা কোনো যুক্তি দেয় না বা বিরোধীতা করে। কারণ, সম্ভবত তারা জানে সেনাবাহিনী মোতায়েন হলে নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হবে। মাঠে-ময়দানে, রুট লেভেলে, তৃণমূল পর্যায়ে এবং এটা আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। তারা নিরপেক্ষতাকে ভয় পায়। এই জন্যই তারা সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে কাজ করে। আমি মনে করি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপরে জনগণের আস্থা আছে। বাংলাদেশের মানুষের জনজীবন, বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক জীবন এবং এই রাজনৈতিক প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভাবিষ্যত এবং সব কিছু নির্ভর করে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের উপরে। অতএব, এই নির্বাচনে কেন সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে না, এটা আমার মাথায় কোনো মতেই আসছে না। সকল ক্ষেত্রে যদি সেনাবাহিনী নিয়োজিত থাকতে পারে, তাহলে সবচেয়ে বড় ক্ষেত্রে নিয়োজিত করায় কেন আওয়ামী লীগ বিরোধীতা করে, এটি কঠিন এবং পুরো রহস্যপূর্ণ একটি প্রশ্ন। আমরা কামনা করব আওয়ামী লীগ বুঝবেন, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও বুঝবেন এবং তারাও সম্মত হবেন যে, নির্বাচনের অন্তত আট থেকে দশ দিন পূর্বে সেনাবাহিনীকে ব্যাপকভাবে মোতায়েন করা উচিত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কেউ কেউ বিভিন্ন পত্রিকার কলামে বলে থাকেন, সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করা হবে। এটা একটা ভোগাস ও ফালতু তথ্য। ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মারা গেল’। স্ট্রাইকিং ফোর্স আসার জন্য কোনো গন্ডগোলকারী অপেক্ষা করবে না। যা করার তা আগেই করে নিবে। রাতের বেলায় ভোট দিয়ে দিবে, এক রাত আগে বিএনপি পন্থী বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিবে। এটা একটা সাইলেন্ট পয়জনিং এর মতো কাজ করে। সেজন্য আমাদের পুরনো থিওরি, পুরনো পদ্ধতি বদলিয়ে নতুন থিওরি, নতুন পদ্ধতির আমল করতে হবে।
পরিচিতি : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
মতামত গ্রহণ : সাগর গনি
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ