সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কেন লড়ছেন নারী যোদ্ধারা
রাশিদ রিয়াজ : সিরিয়ায় রাকায় আইএস জঙ্গিরা পরাজিত হওয়ার পেছনে নারী যোদ্ধাদের রয়েছে এক বিরাট ভূমিকা। সিএনএন’এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে চার বছর ধরে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে আইএস জঙ্গিদের যুদ্ধে রাকা নগরী ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
এ যুদ্ধে নারীরা কেন লড়ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলছেন, শহরটিতে নারীদের মুক্ত করতেই তারা লড়েছেন। কারণ রাকায় নারীরা ভয়ঙ্করভাবে আইএস জঙ্গিদের হাতে নিগৃতীত ও নির্যাতিত হয়েছেন। অসংখ্য নারীদের যৌনদাসীতে পরিণত করেছে আইএস জঙ্গিরা। তারা নারীদের নিলামে তুলে বিক্রি করেছে। বিশেষ করে কুর্দিশ-ইয়াযিদি সংখ্যালঘু নারীদের ইরাক থেকে পাচারের পর রাকায় এনে জড়ো করা হত। গত মঙ্গলবার যখন রাকায় আইএস জঙ্গিদের পরাজিত হওয়ার ঘোষণা আসে তখন কুর্দিশ উইমেনস প্রোটেকশন ইউনিট (ওয়াইপিজে) জানায় আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে যুদ্ধে তাদের অন্তত ৩০ নারী যোদ্ধ নিহত হয়েছে। এখনো তারা আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন। ওয়াইপিজে এক বিবৃতিতে জানায়, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কমরেডদের এ যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে এবং নির্যাতিত নারীদের উদ্ধার ও রক্ষায় সংগ্রাম চলবে। নারী যোদ্ধাদের একজন শান্দা আফরিন জানান, অস্ত্র হাতে তাদের এ লড়াই মুক্তিকামী নারীদের পথ দেখাবে। আফরিন বলেন, আমাদের নেতা আব্দুল্লাহ ওকালান নারীর স্বাধীনতায় জোর দেন, আর আমরা সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যেতে এখনো মানসিকভাবে অটুট রয়েছে। আমাদের যুদ্ধ শুধু আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নয়, নারীর প্রতি যাদের সহানুভূতিশীল মানসিকতা নেই তাদের বিরুদ্ধেও। কারণ আইএস জঙ্গিরাই যে একমাত্র শয়তান তা নয়, নারীর শত্রু অনেক সময় নারীরাও। নারীদের শিক্ষা প্রয়োজন এবং মতাদর্শগতভাবে বেড়ে ওঠাও তাদের জন্যে জরুরি। কুর্দিস্তান ওয়ার্কাস পার্টি বা পিকেকে’র প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ ওকালান এখন কারাগারে। তুরস্কে তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তুরস্ক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ পিকেকে’কে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে অভিহিত করেছে। গত সপ্তাহে আব্দুরøাহ ওকালানের ছবি সম্বলিত পিকেকে’একটি পতাকা উড়ান কুর্দি যোদ্ধারা। আভরিম দিফ্রামা এখনো কিশোরী অথচ তিন বছর আগেই তিনি আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নেন। এখন তার বয়স কুড়ি। তিনি জানান তার অনেক নারী সহকর্মীকে যুদ্ধে হারাতে হয়েছে। কিন্তু তাদের আত্মত্যাগ তাকে এ যুদ্ধে আরো তীব্র লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করেছে। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ করছি আমাদের স্বাধীনতার জন্যে। আমাদের নেতা আব্দুল্লাহ ওকালানের মুক্তির জন্যে। রাকায় নারীরা বিশেষভাবে আইএস জঙ্গিদের হাতে নির্যাতিত হয়েছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে এবং সেই সব নারীদের মুক্তির জন্যে আমরা লড়ছি। দৌলত রোমিনের বয়স ২৪, ওয়ান থেকে এই নারী যোদ্ধা গত সাড়ে চার বছর ধরে রাকায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাবাক ও আল-হলেও তিনি যুদ্ধ করেছেন।