বিচিত্র একজন ডিপজল
মানুষের বিচিত্র জীবন, সমাজ সংসারে মানুষ কত না বিচিত্র জীবন ধারন করেন। রাজনীতি, সমাজনীতি, ডাকাতি, চুরি, প্রতারণা, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি। নিজেকে জাহির করতে, প্রতিষ্ঠা করতে যা কিছু প্রয়োজন মানুষ তাই বেছে নেয়। কেহ অর্থ উপার্জন করতে, কেহ অর্থ বিলিয়ে দিতে, আবার কেহ অর্থ নষ্ট করতে। ১ টাকা উপার্জন করতে মানুষের অনেক বিচিত্র কাহিনী সম্বন্ধে কিছু না কিছু আমরা সবাই জানি। টাকা নষ্ট হয় কিভাবে তাও জানার বাকি নেই। মদ, জুয়া, নারীর মাধ্যমে অনেকেই টাকা নষ্ট করে থাকেন। কিন্তু টাকা বিলিয়ে দিতে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে অনেক কম মানুষকেই টাকা বিলিয়ে দিতে দেখেছি। অনেক নেতাকে জাকাতের কাপড় নিয়ে রাজনীতি করতে দেখেছি, হেলিকপ্টারে গমন করে ১০০ পিছ কাপড় বিলাতে দেখেছি। রাজনৈতিক ধান্দাবাজি করতে দেখেছি। সেই ছোটকাল থেকে পেশাগত কারণে গাবতলির গরু হাটে যাতায়াত ছিল। ডিপজলের নানা লালে ফকিরের সঙ্গে পরিচয় সূত্রে তাদের বাড়ীতে যাতায়াত। পিতা সোহরাব মহাজন, মা জোবায়েদা বেগম অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। বিশেষ করে মা জোবায়েদা বেগম ছিলেন ব্যক্তিক্রম মানুষ, আমি তাকে আপা বলে ডাকতাম। আমাকেও নিজের ভাইয়ের মতো মনে করত, কারণ লালে ফকিরের কোনো ছেলে ছিল না। সোহরাব মহাজনের সাত ছেলে-মেয়ের মাঝে মনোয়ার হোসেন ডিপজল চতুর্থ, কিন্তু নানা লালে ফকিরের কাছে ছিলেন অদ্বিতীয়। ছোট থেকেই ডানপিটের ছিলেন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে হৈ-হল্লা করা ছিল ডিপজলের নেশা। লেখাপাড়ায় বেশিদূর না এগোলেও, মানুষ হিসেবে ডিপজলের গ্রহণযোগ্যতা ছিল আকাশ ছোঁয়া। মিরপুরের এমন একজন মানুষ পাবেন না, ডিপজলের কাছে গিয়ে সহায্য পায় নাই। ডিপজল রাজনীতি বোঝতো না এবং তা মন দিয়ে করতোও না। ১৯৯২ সালে মির্জা আব্বাস মেয়র থাকার সময় গরু হাটের টেন্ডার নিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে আমি পরিচয় করিয়ে দেই। সেই থেকে বিএনপি ঘরানার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯৪ সালে কমিশনার নির্বাচনে বিএনপি-আওয়ামী লীগ কোনো দল থেকে নমিনেশন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে ১৬৯০০ ভোট পেয়ে ৯নং ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হন। বিএনপির প্রার্থী ৬৫১ ভোট এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৯৮৭ ভোট পান। আমার মতো যারা ডিপজল অনুরাগী, ডিপজল পাগল তাদের সংখ্যা অসংখ্য। আমি দানবীর রনপিশাকে দেখি নাই, কিন্তু ডিপজলকে দেখেছিল গরীব মানুষের ছেলে-মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান, লেখাপড়ার খরচ, কর্মসংস্থান, গরীব মানুষের জমিজমা, বাড়ি-ঘর যদি কোনো সন্ত্রাসীরা দখল করেছে, ডিপজল সবসময়ই তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। নানার অগাধ সম্পত্তি থাকার কারণে ডিপজলের পিছনে তাকাতে হয় নাই। নানার অফুরন্ত অন্ধ ভালোবাসার একটি নমুনা বলছি। বিউটি সিনেমা হলে বন্ধুদের নিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছিল ডিপজল, টিকেট না পেয়ে এস.এ খালেকের সঙ্গে দেখা করেন। খালেক সাহেব উত্তেজিত হয়ে বলেন, তোর নানারে কইছ সিনেমা হল দিয়া লইতে। নানা লালে ফকির বিউটি হলে ঘুঘু চরানোর ঘোষণা দেন। বিউটি হলের তিন দিকে পর্বত, এশিয়া ও তরঙ্গ নামের তিনটি সিনেমা হল নির্মাণ করতে থাকেন। এশিয়া ও পর্বত হল চালু হলেও তরঙ্গ নির্মাণ বন্ধ রাখেন, মিরপুর- ১নং ইছা দালালের ছেলে মোহাম্মদ হোসেন সনি নামের সিনেমা হলটি করেন বলে। ডিপজল নায়ক হবেন, সিনেমায় অভিনয় করার ইচ্ছা পোষন করেন নানার কাছে। নাতির শখ বলে কথা। ডিপজল কথা বলতে জানেন না, অভিনয় বুঝেন না এ কারণে কোনো পরিচালক, প্রযোজক তাকে সিনেমায় নেয় না। অবশেষে নানার ইচ্ছায় আফজাল কথাচিত্র, সাম পিকচার, পর্বত সিনেমা নামে তিনটি প্রযোজনা সংস্থা করে দেন। পরিচালক কাজী হায়াৎ এর মাধ্যমে প্রথম ছবি পাগলী মুক্তি দেন, নায়ক হিসেবে টাকার পাহার সতী কমলা কোনো ছবিই হিট করতে পারেন নাই। অবশেষে বিশু ছবিতে ভিলেনের চরিত্রে ডিপজল সুপারহিট। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নাই আজকের মনোয়ার হোসেন ডিপজলের। মা ভক্ত ডিপজল দুই ছেলে, এক মেয়ের গর্বিত পিতা। সর্বশেষ ছবি দুলাভাই জিন্দাবাদ, রাজেস ফ্লিমের অধীনে মমতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত, নাদের খান প্রযোজিত। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ডিপজলের জন্য দেশের মানুষ একের পর এক দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। ডিপজলকে কাজী হায়াৎ স্বাধীনতার গল্প, জাতির জনকের স্মৃতিচারক, শেখ হাসিনার দেশ উন্নয়ন দেখে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। আমার দেখা ডিপজলের মতো বাংলাদেশের ১০টি স্থানে, ১০ জন ডিপজল জন্মগ্রহণ করলে সেই এলাকায় গরীব ও অসহায় মানুষ থাকত না।
একজন মানুষের সবগুণ থাকে না, সবাই ডিপজল হতে পারে না। টাকা অনেকের কাছে আছে, ডিপজলকে অনেকেই টাকায় টপকিয়ে যেতে পারবেন, কিন্তু মনের দিক দিয়ে ডিপজল একজনই জন্মগ্রহণ করেছে। ডিপজল ঘরে ঘরে বারে বারে জন্মায় না, জন্মগ্রহণ করবেও না। খল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য, অগাধ অর্থের মালিক হওয়ার জন্য, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অনেক আঘাত সইতে হয়েছে, অনেক কথার জবাব, অনেক মিথ্যা মামলার আসামি হতে হয়েছে ডিপজলকে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এমন কোনো কয়েদী ছিলেন না, ডিপজলের সহায়তা পান নাই, কারাগারে কয়েদীদের কষ্ট দেখে অনেক ফ্যান কিনে দিয়েছেন। অনেক আসামি টাকার অভাবে জামিন নিতে পারেন নাই, তাদের জামিনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অনেক আসামিকে চাকুরী দিয়ে পুনর্বাসন করেছেন। অনেক পুলিশ অফিসার ডিপজলের ইট খোলার ইট বাকিতে নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। ডিপজলের কাছে যারা পৌঁছাতে পেরেছেন, তারাই আমার এই লেখার সঙ্গে একমত হবেন। বিচিত্র এদেশ, কত বিচিত্র মানুষের বসবাস, এমন হাজারো মানুষের মাঝে বিচিত্র একজন মানুষ মনোয়ার হোসেন ডিপজল। বিচিত্র তার সেবা, বিচিত্র তার জীবন। সবার কাছে ডিপজলের জন্য দোয়া চেয়ে লেখা শেষ করতে চাই। পাঠকের চাহিদা থাকলে ডিপজলকে নিয়ে অনেক বিচিত্র কাহিনী লিখতে চাই। আশা আছে, জানা আছে, কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে, অনেকে অজানা কথা।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা : আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ