সেনা মোতায়েন ইস্যুটি নিরাপত্তা কেন্দ্রিক নয় রাজনৈতিক
সংসদ ভেঙ্গে দিতে হলে আগে দেখতে হবে যে, সংবিধানের মধ্যে থেকে নির্বাচন হবে, নাকি সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচন হবে, সেটা বড় প্রশ্ন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের গত নির্বাচন থেকে শুরু করে সংবিধানের যে ধারা বজায় আছে, সেটি বজায় রাখাটাই অতি উত্তম হবে। সেনা মোতায়েনের ব্যাপারটি নিয়ে একটি বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমি মনে করি, সেনাবাহিনী দেশ রক্ষার জন্য তৈরি করা হয় এবং দেশের ভেতরে যখন কোনো অবস্থা বেসামরিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করা হয়। অতীতের জাতীয় নির্বাচনে আমরা দেখেছি, সেনাবাহিনীকে মূলত দায়িত্ব প্রদান করেছে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। সারা দেশে যখন একসঙ্গে নির্বাচন হয়, তখন স্বভাবতই আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে ফোর্স আছে, যে বাহিনী আছে, তাদের তখন অনেক প্রয়োজন হয়। এই বাহিনী যখন দেশের নিরাপত্তা রক্ষার্থে অসুবিধার সম্মুখীন হয়, তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ডাকা হয়। সেক্ষেত্রে এটি সম্ভব। প্রচলিত প্রথা আছে, আমরা দেখে এসেছি এবং এটির চর্চা রয়েছে, এখানে সেনাবাহিনী অংশগ্রহণ করে। এখানে আরেকটি বিষয় উঠে এসেছে, সেটি হলো সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে আমরা দ্বন্দ দেখছি। এখানে যদি সেনাবাহিনী বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করার থাকে, সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর যে প্রশিক্ষণ, আমি মনে করি, তারা এটিতে অভ্যস্ত নন। তারা এটির চর্চা করে না। সেক্ষেত্রে হঠাৎ করে তাদের উপরে এই ক্ষমতা অর্পণ করা অর্থপূর্ণ নাও হতে পারে। কারণ, তারা যে ধারায় প্রশিক্ষিত হয়েছে সেখানে স্বভাবতই এটা একটা নতুন বিষয়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে এখানে বিচারের ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা অপ্রতুল, সেটি আমরা দেখিনি। এর আগের নির্বাচনে অনেক অতিরিক্ত নির্বাহী মেজিস্ট্রেটকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল। সেখানে আমি সংখ্যার স্বল্পতা দেখিনি। সেক্ষেত্রে যদি সংখ্যা স্বল্পতা না হয়, তাহলে নতুন ধারনা তৈরি করে দেশে এবং বিদেশে বিতর্কিত হওয়ার দরকার কী? নির্বাচন একটি রাজনৈতিক বিষয়, এখানে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা স্বভাবতই দেশে এবং বিদেশে প্রশ্ন স্বাপেক্ষ করে তোলে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যতক্ষণ বেসামরিক ক্ষমতার মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হবে, ততক্ষণ সেনাবাহিনীকে দূরে রাখাই ভাল। আর যতটুকু সেনাবাহিনীর সাহায্য নেওয়া দরকার, ঠিক ততটুকুই নেওয়া উচিত। কেউ যদি মনে করেন, এটা করতেই হবে, বিচারিক ক্ষমতা দিতেই হবে, সেক্ষেত্রে আমি মনে করি, এই ইস্যুটি নিরাপত্তা কেন্দ্রিক নয়, এটি রাজনৈতিক।
পরিচিতি: নিরাপত্তা বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি
সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ