বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০১৭ নীরবেই চলে গেলো
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ও বেগম জিয়া দজনই বিশ্ব শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী দিনটি এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে না। ২০১৩ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত দেশের ২৯ কৃতী শিক্ষককে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন কমিটির সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। এ বছর বরেণ্য শিক্ষক উদ্যোক্তা অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, প্রাণী ও পরিবেশ বিজ্ঞান গবেষণায় পথিকৃৎ প্রয়াত অধ্যাপক ড. কাজী জাকের হোসেনসহ ৫ শিক্ষক। মূল বক্তব্যে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল বলেন, আমরা ফাইল নিয়ে কাজ করি না, যন্ত্র নিয়ে কাজ করি না। আমরা কাজ করি রক্ত মাংসের মানুষ নিয়ে। যাদের চোখে রঙ্গিন চশমা এবং যারা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ও বেগম জিয়া দু’জনই অতীতে বিশ্ব শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু শিক্ষকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী দিনটি এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে না। ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে পৃষ্ঠপোষক করে গঠিত বিশ্ব শিক্ষক দিবস জাতীয় উদযাপন কমিটি ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দেশের ২৪ কৃতী শিক্ষককে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন কমিটির সম্মাননা প্রদান করে। সম্প্রতি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান উপাচার্য নিযুক্ত হওয়ার পর নতুন পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তার সভাপতিত্বে ২৬ সেপ্টেম্বর কমিটির সভায় পূর্বের ধারাবাহিকতায় বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০১৭ যথাযথভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ৫ অক্টোবর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও তার পরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা থাকায় ১৭ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন উপলক্ষে র্যালি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি মিলনায়তনে দেশের বরেণ্য ও কৃতী শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান এবং শিক্ষার মান ও শিক্ষকদের মর্যাদা উন্নয়নে প্রতিজ্ঞাপত্র পাঠ করা হয়। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের লেখা মূল বক্তব্য হিসেবে উপস্থাপিত হয়। যেখানে তিনি বলেন, ‘আমরা ফাইল নিয়ে কাজ করি না, যন্ত্র নিয়ে কাজ করি না। আমরা কাজ করি রক্ত মাংসের মানুষ নিয়ে। যাদের চোখে রঙ্গিন চশমা এবং যারা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে।’ অনুষ্ঠানে যাদের সম্মাননা প্রদান করা হয় তারা হলেন, বরেণ্য শিক্ষক উদ্যোক্তা অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, প্রাণী ও পরিবেশ বিজ্ঞান গবেষাণায় পথিকৃৎ প্রয়াত অধ্যাপক ড. কাজী জাকের হোসেন, ফরিদপুরের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রাথমিক শিক্ষক রোকেয়া বেগম, বগুড়ার প্রাথমিক শিক্ষক ফজলুর রহমান, বরিশালের মাধ্যমিক শিক্ষক পাপিয়া জেসমিন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ও ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের প্রধান কর্মকর্তা বিয়াট্রিস ক্যালডুন যথাক্রমে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ব শিক্ষক দিবস জাতীয় উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক ও জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদের সভাপতিত্বে গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি মিলনায়তনে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২ পর্যন্ত চলা এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মকসুদ কামাল, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হক, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ কারিগরি কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক কেএম এনামুল হক ও একশনএইড বাংলাদেশের শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাহিদ জামী। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের শুভেচ্ছা বাণী পাঠ করেন আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষক মনিরা আফরোজ। অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান শিক্ষকতা পেশায় কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্তদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, শিক্ষকদের অবদান অবিস্মরণীয়। আগের চেয়ে অবস্থার উন্নয়ন হলেও আমরা এখনো শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মান ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারিনি। অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, শিক্ষকের বিকল্প হয় না। সব নিবেদিত শিক্ষকই শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মহাসচিব মহসিন রেজা ও আইএইচডি সদস্য খান মোশাররেফ হোসেন আয়োজকদের পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ জানান। উল্লেখ্য এর আগে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘স্বাধীনভাবে পাঠদান, শিক্ষক হবেন ক্ষমতাবান’ প্রতিপাদ্যে শত শত শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এক বিশাল র্যালি বের করেন। তেজগাঁও মহিলা কলেজের ছাত্রীরা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরি ও কলেজ শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন, ইউনেস্কো, একশনএইড, গণস্বাক্ষরতা অভিযান, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, ব্লাস্ট, আইএইচডিসহ আন্তর্জাতিক ও জাতীয় শিক্ষা সংস্থার প্রতিনিধি এবং অভিভাবকরা এতে অংশ নেন।
লেখক : উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সম্পাদনায় : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ ও খন্দকার আলমগীর হোসাইন