নেপালে ক্ষমতার পালাবদল হচ্ছে, চীনের প্রভাব নিয়ে চিন্তিত ভারত
মাছুম বিল্লাহ : নেপালের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে চলেছে বামপন্থীরা। ক্ষমতায় এলে তারা ভারতের বদলে চীনের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখবে। ফলে আগামী বছরের শুরু থেকেই হিমালয়ের এই গুরুত্বপূর্ণ দেশটি ভারতের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। এমনটি জানিয়ে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ ছাপ দেওয়া একটি রিপোর্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং বা ‘র’। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী ২৬ নভেম্বর নেপালের সাধারণ নির্বাচনের পরেই একসঙ্গে মিশে যেতে চলেছে তিনটি বামপন্থী দল। আসন্ন নির্বাচনে ওই তিনিটি বাম দল সিপিএন (ইউএমএল) এবং নয়া শক্তি পার্টির মধ্যে নির্বাচনী জোট গঠিত হয়েছে।ভ একসঙ্গে মিশে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করতে তিনটি পার্টির নেতাদের নিয়ে একটি কো-অর্ডিনেশন কমিটিও গঠন করা হয়েছে। গত মে মাসে অনুষ্ঠিত নেপালের পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফলে বামঝড়ে কার্যত উড়ে গিয়েছে নেপালি কংগ্রেস। ফলে সাধারণ নির্বাচনে নেপালের ক্ষমতা দখলের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে বামপন্থীদের। নেপালে বামপন্থীরা ক্ষমতায় এলে ভারতের বিজেপি সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো হবে না। আন্তুর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখতে নেপাল তখন চীনের দিকেই ঝুঁকবে। ফলে নেপালের রাজনীতির ওপরে ভারতের নিয়ন্ত্রণ ক্রমশই কমবে এবং নেপালকে কেন্দ্র করে ভারতের বিরুদ্ধে চীন তাদের ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কার্যকলাপ’ চালিয়ে যাবে।
র’য়ের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী বছরের ২১ জানুয়ারির মধ্যে নেপালের নবগঠিত সংসদে নতুন প্রজাতান্ত্রিক সংবিধান পেশ করতে হবে। এই সংবিধান চালু হলেই আনুষ্ঠানিকভাবে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটবে এবং তথাকথিত ‘হিন্দুরাষ্ট্র’-এর তকমাও মুছে ফেলবে নেপাল। নেপালের বামপন্থীদের সঙ্গে সিপিএম এবং কংগ্রেসের একটি অংশের সুসম্পর্ক থাকলেও বিজেপির সঙ্গে তাদের গভীর মতাদর্শগত বিরোধিতা রয়েছে। এই বিরোধিতারই ছাপ দুদেশের কুটনৈতিক সম্পর্কের ওপরে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে নেপাল এবং ভুটান অবস্থানগত কারণে ভারতের কাছে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুটান ও ভারত সংলগ্ন ডোকালাম সীমান্তে চীনের সঙ্গে এমনিতেই উত্তেজনা জারি রয়েছে। তার পরে নতুন করে নেপাল মাথাব্যথার কারণ হলে সমস্যা গুরুতর আকার নিতে পারে।
টানা একদশকের গৃহযুদ্ধের সময় পুষ্পকুমার দহাল ওরফে প্রচ-র নেতৃত্বাধীন মাওবাদীদের সঙ্গে সিপিএন(ইউএমএল)-এর একদমই সুসম্পর্ক ছিল না। এই দুটি দলের একীভূত হওয়ার প্রস্তাবকে রীতিমতো অপ্রত্যাশিত বলে ভাবছে রাজনৈতিক মহল। নয়াশক্তি পার্টি গড়ে উঠেছে গত একবছর আগে। প্রচন্ডর সঙ্গে মতভেদের জেরে মাওবাদী দল ছাড়েন একদা তার ডানহাত বুবুরাম ভট্টরাই। তিনিই নয়াশক্তি পার্টি গঠন করেন। এই তিনটি রাজনৈতিক দল মিশে গেলে তারা কার্যত অপ্রতিরোধ্য শক্তি হয়ে উঠবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
পশ্চিম ও দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার স্বাধীনতাকামী জোটের নয়া চেয়ারম্যান খাঙ্গো কন্যাক
মাছুম বিল্লাহ : পশ্চিম ও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলো নিয়ে গঠিত জাট দ্য ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ওয়েস্ট সাউথ ইস্ট এশিয়া (ইউএনএলএফডবি�উ)-এর নয়া চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন খাঙ্গো কন্যাক।
তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম শক্তিশালী স্বাধীনতাকামী সংগঠন ন্যাশনাল সোশালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড (খাপলাং) সংক্ষেপে এনএসসিএন (কে)- এর প্রধান। এর আগে এই সংগঠনটির প্রধান ছিলেন ইউনাটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা-স্বাধীন) এর সামরিক প্রধান ও চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী পরেশ বড়–য়া।
মিয়ানমারের তাগা এলাকায় এই অঞ্চলের কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সম্মিলিত মঞ্চ ইউএনএলএফডবি�উ-এর সাধারণ অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে এই গুরু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কন্যাকের উপর। ইউএনএলএফডবি�উ-এর তদানীন্তন চেয়ারম্যান তথা এনএসসিএন (কে)-প্রধান এসএস খাপলাঙের মৃত্যুর পর এই পদ শূন্য ছিল। খাপলাঙের মৃত্যুর পর এই পদে সাময়িক দায়িত্বে ছিলেন ইউনাটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা-স্বাধীন) এর প্রধান সেনাধ্যক্ষ পরেশ বড়–য়া। অবশেষে গত ১৩ এবং ১৪ অক্টোবর মিয়ানমারের তাগায় অনুষ্ঠিত সম্মিলিত জঙ্গি সংগঠন ইউএনএলএফডবি�উ-এর সাধারণ সভায় স্থায়ী চেয়ারম্যান পদে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হয়েছেন খাঙ্গো কন্যাক।
সংগঠনের সাধারণ সভার শেষ দিন ভারতীয় নাগা বংশোদ্ভূত কন্যাকের নাম যুগ্মভাবে ঘোষণা করেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বোডোল্যান্ড (এনডিএফবি)-এর বিদেশ সচিব এনই ইজারা এবং কমতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও)-এর জীবন সিংহ কোচ।
উল্লেখ্য, এনএসসিএন (কে), উলফা (স্বাধীন), এনডিএফবি এবং কেএলও উগ্রপন্থীরা মিলে গঠন করেছিল সম্মিলিত জোট ইউএনএলএফডবি�উ। সেই জোটের প্রধান হলেন খাঙ্গো কন্যাক।