খালেদা ম্যাডামের দেশে ফেরা শান্তি বনাম অশান্তি
খালেদা জিয়া ফিরবেন কি ফিরবেন না এ বিষয়ে সংশয় সন্দেহ নিরসন করে ফিরলেন। তার ফেরার দিনে ঢাকা আবারো পড়েছিল অসহনীয় যানজটে। সে এক কাহিনী। সংবর্ধনার নামে মানুষের জীবন নিয়ে মশকরা। এই সংস্কৃতি কবে শেষ হবে কেউ জানে না। প্রধানমন্ত্রী ফিরলেও এক চেহারা। যে যখন গদীতে তখন তাকে নিয়ে এমন জাতীয় বিষয় দেখছি ছেলেবেলা থেকে। পাকিস্তান আমলে আমরা জেনারেলদের দেখে বড় হয়েছি। পরে এরশাদ আমলে দেশে এর এমন ব্যবহার হয়েছিল যেখানে যেতেন মনে হতো বিশ্বজয় করে ফিরেছেন। অথচ পরে দেখতাম সব আসলে বানোয়াট। শেখ হাসিনার ব্যাপারটা একটু আলাদা। তার আন্তর্জাতিক ইমেজ এখন অনেক শীর্ষে। বলব, দেশের চেয়ে বিদেশেই তিনি নন্দিত বেশি। তারপর ও বাড়াবাড়ি করার কারণ ছিল না। আর খালেদা জিয়া?
তিনি তো গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। পুত্রের কাছে সময় ব্যয় করে আসা খালেদা জিয়া রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে কোনো কড়া কথা বলেননি। এমনকি বিদেশে থাকাকালীনও এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি। ফিরে এসেছেন ভালো করেছেন। মাথার ওপর বিচার ও গ্রেফতারের নোটিশ ঝোলার পরও তার ফিরে আসা বিএনপির জন্য দরকারের ছিল। কিন্তু কি কারণে রাস্তা বন্ধ করে মানুষের দুর্ভোগ টেনে এনে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া? যারা তাকে তা দিলেন, তাদের পরের চেহারাটা কেমন? কদিন যেতে না যেতেই তাদের মারামারি দেখলাম আমরা। কালো কোটপরা বিএনপির আইনজীবীরা একে অপরের সঙ্গে মল্লযুদ্ধে লিপ্ত হলেন। শুধু কি তাই? মহিলা আইনজীবীকেও দেখলাম মারামারিতে কম যান না। ব্যস চুকে গেল ঐক্য। শুরু হয়ে গেল আসল চেহারা দেখানো। এই যদি তাদের চরিত্র হয়, তো কিভাবে তারা আওয়ামী লীগকে টপকে যাবেন? তারা সবসময় বলেন, তাদের চাপে রাখা হয়েছে। কিছু করতে দেওয়া হচ্ছে না। একথা যে মিথ্যা তা ও নয়। তাহলে এই কঠিন সময়ে তারা সবাই মিলে সমস্যা মোকাবেলার পরিবর্তে কেন এমন মারামারিতে লিপ্ত হলেন? তাও কি কারণে? কে বা কারা মাইকের সামনে যাবেন এ নিয়ে যারা এমন করে তাদের হাতে দেশ জনগণ বা গণতন্ত্র কি নিরাপদ?
আসলে এটা এখন আমাদের জাতীয় চরিত্র। সব বিষয়ে নেতাদের এত বাড়াবাড়ি আর অতিকথন এখন রোগ। সরকারি দলের নেতাদের কথার তোড়ে তাদের অর্জন ভেসে যাচ্ছে। আর বিএনপির নেতারা আগাম লোভে বর্তমানের পায়ে মারছে কুড়াল। এদিকে দেশের পরিবেশ বিপন্ন। রোহিঙ্গা সমস্যার মত জ্বলন্ত সমস্যাও আর আগুণ জ্বালাতে পারছে না। চাটগাঁর সে এলাকাগুলো দিনে দিনে পাহাড় পর্বত এমনকি সবুজহীন হয়ে উঠছে। কয়েকমাসের জন্য বাড়ীর বাইরে থাকা লোকজন বাড়ি ফিরে এসে নিজেদের বাড়িঘর এলাকা চিনতে পারছে না। এটা কি সহজ কথা? ধর্ম সম্প্রদায় বা অন্য যে কোনো ইন্ধনে আমরা বরাবর চলে যাই মোহ অথবা ভুল বিষয়ের কাছে। এদিকে আমাদের সমাজে দেশে বিপদ ঢুকে আমাদের জীবন শেষ করলেও নিস্তার নাই। রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের জীবনে যে কি বিপদ টেনে আনছে, তা জানার পরও কোনো রাজনীতি ঐক্যের কথা বলছে না। বাংলাদেশের অর্জন বা উন্নতি শেষ হলেও বোধকরি তাদের টনক নড়বে না। তারা ব্যস্ত থাকবেন কোন নেত্রী বড় বা কাকে বড় করা যায় সে ঝগড়ায়।
খালেদা জিয়া জামিন পেয়েছেন। খবরে দেখলাম তিনি গুলশান আফিসে বসবেন। যার মানে বিএনপি রাজনীতিতে ফিরছে। নিন্দুকেরা বলছে কোথাও নাকি আপোস হচ্ছে। আর আমরা বলছি, যে যাই বলুন, আসলে সবাই মিলে সমাজকে উচ্ছনে যেতে দিবেন না। গদী আর পাওয়ার গেইমে পানিবদ্ধতা রোহিঙ্গা বাজারদর সবগুলিয়ে বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যাবেন আপনারা? সেটাই এখন দেখার বিষয়।
লেখক : সিডনী প্রবাসী সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা : আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ