‘চিকিৎসা বর্জ্যরে এক-চতুর্থাংশ মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর’
শাকিল আহম্মেদ : দেশে ওষুধ শিল্পের বিকাশের ফলে সৃষ্ট বর্জ্য ও চিকিৎসা বর্জ্যরে এক-চতুর্থাংশ মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে জানান স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও প্রিজম বাংলাদেশ ‘নির্মল পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবান প্রজন্ম গড়তে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক সেমিনারে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক। সভাপতিত্ব করেন ওসমান গণি প্যানেল মেয়র ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে ১৯৯টি এ্যালোপ্যাথিক, ১৭২টি আযুর্বেদিক, ২৬৯টি ইউনানি, ২৯টি হারবাল, ২৮টি হোমিওপেথিকসহ মোট ৭শ’র অধিক কোম্পানি নিয়মিতভাবে ওষুধ উৎপাদন করছে। এই শিল্প বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, অনুজীব, ভারি পদার্থ ও দ্রব্যাদি ব্যবহার হয়। ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানাসমূহ হতে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হয়। চিকিৎসা বর্জ্যরে মধ্যে অসংক্রামণ ও সংক্রামণ বর্জ্য নিয়মিতভাবে তৈরি হচ্ছে। ব্যবহার্য ও অব্যবহার্য, নিডল, সিরিজ, ছুরি, ব্লেড, পিপেট, অব্যবহৃত ওষুধ, গজ. ব্যান্ডেজ, ভাঙ্গা কাঁচের টুকরোর মতো অসংক্রামক পদার্থ এবং রক্তসহ দেহের অন্যান্য ফ্লুইড, ফিটাস, অমরা, টিস্যুর মতো বিভিন্ন সংক্রমণ বর্জ্য প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, এছাড়াও চিকিৎসা বর্জ্যে উচ্চমাত্রার বিষাক্ত পদার্থ প্যাথজোন, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থাকে। একটি জাতিকে উন্নত আধুনিক জাতি হিসেবে গড়ে তোলার প্রথম শর্ত হচ্ছে একটি স্বাস্থ্যবান প্রজন্ম। যার জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ। উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ শহর থেকে গ্রাম সকল পর্যায়ে সকল ধরনের নাগরিক সেবা প্রদান করে আসছে। গৃস্থালির বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য ও শিল্প বর্জ্যরে পাশাপশি মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানসমূহকে কাজ করতে হচ্ছে। অধিক জনসংখ্যার চাপে নগর ও শহর পর্যায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জের বিষয়।
তিনি আরও বলেন, নানাবিধ প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাসমূহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ আন্তরিকতার সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে। এদেশে মেট্রোপলিটন এলাকা শহর ও গ্রামীণ এলাকায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৭শটি বিশেষায়িত ও সাধারণ হাসপাতাল, ক্লিনিক মেডিকেল কলেজ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এসকল হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রতিদিন কয়েক লাখ রোগীর চিকিৎসা কার্যক্রম চলে। এসবের জন্য প্রতিনিয়ত মেডিকেল বর্জ্য সৃষ্টি হচ্ছে। আর এসকল বর্জ্যরে মাধ্যমে এইচআইভি, হ্যাপাটাইটিজসহ নানা সংক্রামণ রোগ ছাড়ানোর ঝুঁকি থাকে। ফার্মাসিউটিক্যালসসমূহ থেকে উৎপন্ন বর্জ্যও সমানভাবে ক্ষতিকর। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, অব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিষাক্ত রাসায়নিক উপকরণ, রাসায়নিক বর্জ্য, তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য ও ভারি পদার্থসমূহ মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য বিরাট হুমকি তৈরি করে। এসকল ক্ষতিকর বর্জ্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না করা হলে তা পরিবেশে মিশে গিয়ে মাটি, পানি ও বায়ু দূষণ ঘটাবে। যার দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে জনস্বাস্থ্যের উপর। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ