রোহিঙ্গারা যেন কোনো অমীমাংসিত ইস্যু না হয়
জাহিদ আল আমীন
দুর্ভাগ্যক্রমে আধুনিক পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠীটি বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশীর নাগরিক। তারা রোহিঙ্গা। মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। আগেই আশ্রিত ছিল, আরও সাড়ে চার লাখ। সবমিলিয়ে প্রথমদিকে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ ও পুণর্বাসনে নানা ধরণের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী যখন থেকে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ ও পূনর্বাসনের দায়িত্ব হাতে নিয়েছে, বান্দরবান ও কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা উদ্ধাস্তুদের মধ্যে অনেকটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে।
তবে, এখনো আমাদের অনেক কাজ বাকি। খাদ্য-বস্ত্র, বাসস্থান, নিরাপত্তাসহ আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে দ্রুত রোহিঙ্গাদের নিজভূমে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, সেজন্য সবরকম চেষ্টা ও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা দেখি, এশিয়ায় কাজ করতে হলে মায়ানমার, বাংলাদেশ এবং ভারত- এই তিন রাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী বিশাল আয়তনের দুর্গম পার্বত্য এলাকাটি যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রয়োজন। জাতিসংঘ এবং অপরাপর সহযোগী সংস্থা ও দেশকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইন অব্যাহত রাখতে হবে। ত্রাণ ও অন্যান্য সাহায্যের একটা স্থায়ী ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি তাদের ডিএনএ এবং ফিঙ্গার প্রিন্টসহ শতভাগ ডিজিটাল নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে। পানি, টয়লেট, চিকিৎসাসহ অন্যান্য জরুরি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সেনাবাহিনীর সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে থাকলে এদের নিয়ে স্থানীয় বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না। আগস্টে শুরু হওয়া সমস্যাটি এখন ক্রমশ: নানান দিকে শেকড় ছড়াচ্ছে। সরকার প্রধান শেখ হাসিনা নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে এখনও মাইলস টু গো। ১৯৭৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান জিয়াউর রহমান এবং ১৯৯২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান বেগম খালেদা জিয়ার পররাষ্ট্রনীতির কারণে মায়ানমার সরকার বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুটি ভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন করতে সক্ষম হয়েছিল। এই চুক্তির আওতায় ১৯৭৮ সালে দুই লাখ এবং ১৯৯২ সালে আড়াই লাখ রোহিঙ্গাকে নিজভূমিতে প্রেরণ করা হয়েছিলো। ২৫ বছর আগের কাজটি এখন করে দেখানো খুব সহজ কাজ নয়। তবুও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। জাতিসংঘ এবং ওআইসি, আসিয়েন, সার্কসহ সম্ভাব্য টুলসকে কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যেতে হবে। শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নিলে নিদেনপক্ষে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্তে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি সেফ জোন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশকেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের সীমিত সামর্থ্য। দীর্ঘদিন তাদের বয়ে চলা বাংলাদেশের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। রোহিঙ্গারা যেন কোনোভাবেই আরেকটি বিহারি ইস্যু হয়ে না দাঁড়ায়। সমস্যাটি বাংলাদেশের সমস্যা মনে করে সরকারকেই সব ধরণের উদ্যোগে সবার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। রোহিঙ্গারা যেন কোনো অমীমাংসিত ইস্যু না হয়। যেকোনো প্রকারেই হোক রোহিঙ্গা সমস্যার আশু এবং স্থায়ী সমাধান করতেই হবে।
পরিচিতি: প্রবাসী সাংবাদিক
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: তাসকিনা ইয়াসমিন
সম্পাদনা: আশিক রহমান