দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এখনো কেন হতাশাই সঙ্গী টাইগারদের?
অঘোর ম-ল
টেস্টের পর ওয়ানডেতেও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর এক হতাশার গল্প। এই হতাশার পেছনে আছে ইনজুরি সমস্যা, বোলার ও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা। সব মিলিয়ে এই ব্যর্থতাই সঙ্গী বাংলাদেশের। এই প্রথম সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং প্রতিভাবান একঝাঁক ক্রিকেটার নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই ব্যর্থতা? তার উত্তরটা সবচেয়ে ভালো দিতে পারবেন টিম ম্যানেজমেন্ট। সাদা চোখে অবশ্য পরিষ্কার দেখা গেছে, দলের ছন্দপতন সব জায়গায়।
এখানে কতগুলো প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। অধিনায়ক কতটা স্বাধীনতা নিয়ে দল পরিচালনা করতে পেরেছেন। খেলোয়াড়রা নিজেদের কতটা উজাড় করে দিতে পেরেছেন। টিম ম্যানেজমেন্ট কতটা সুন্দরভাবে দল পরিচালনা করতে পেরেছেন? এতগুলো প্রশ্নের উত্তর খুব সহজে পাওয়া যাবে এমনটা ভাবা যায় না। বাংলাদেশ ক্রিকেট সংস্কৃতিতে দল জিতলে বা সামান্য সাফল্য পেলে তার ভাগিদার হিসেবে অনেকেই মিডিয়ার সামনে হাজির হোন। আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্য, কেন বাংলাদেশ ব্যর্থ হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। দিন শেষে উত্তর দাতা সেই অধিনায়ক। এটা আবার নতুন করে চিন্তা করার সুযোগ করে দিল বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। বাংলাদেশের ক্রিকেট হয়তো এগিয়েছে কিন্তু ক্রিকেট সংস্কৃতি তেমনভাবে এগোয়নি। বাংলাদেশের স্কোর বোর্ড দেখেই বোঝা যাবে যে খারাপ করেছে, কেন খারাপ করেছে তার উত্তর খুঁজতে গেলে অনেক কিছুই ভাবতে হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি যে কোনো দলের জন্যই একটা চ্যালেঞ্জিং জায়গা। সেটা এই উপমহাদেশের সবগুলো দলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু প্রত্যেক দল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরকে সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে। বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর হঠাৎ করে নয়, এই সফরের আগে যথেষ্ট সময় হাতে ছিল। এই সফরের চার-পাঁচ মাস আগে বাংলাদেশ এ দলের যদি একটা সফর করতো, ক্রিকেট অপারেশন যদি সেই ব্যবস্থাটা করে দিতে পারত; তাহলে হয়তো আরও বেশি ভাল হতে পারত দলের জন্য, খেলোয়াড়দের জন্য। সেই সুযোগ ক্রিকেট ম্যানেজমেন্ট বা ক্রিকেট অপারেশন কমিটি করেনি, তারা করে দিতে পারেনি। বাংলাদেশ দলের গেম প্ল্যান নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। ওয়ানডেতে কেউ ড্র করার জন্য খেলে না; এটা সত্য কিন্তু ওয়ানডেতে বাংলাদেশ কোনো লক্ষ্য নিয়ে খেলল সেটা বোঝার উপায় নেই এবং যা খেলেছে সেটাকে পজিটিভ ক্রিকেটও বলা যাবে না। তিনটা ম্যাচেই যেভাবে বাংলাদেশ হেরেছে তাকে শুধু বলা যেতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ। লড়াকু বাংলাদেশের একটা ইমেজ তৈরি হচ্ছিল, বেশ কিছুদিন ধরে; বিশেষ করে মাশরাফির অধিনায়কত্বে।
কারণ মাশরাফি, মুশফিক, সাকিব, তামিম, মাহমুদউল্লাহ তারা সেই ২০০৬-৭ সাল থেকে খেলতে খেলতে অনেকটাই অভিজ্ঞ। পাশাপাশি ঘরের মাঠে বাংলাদেশ বাঘ বাইরে বিড়াল। বাংলাদেশ সম্পর্কে মানুষের এ রকম যে ধারণা, সে ধারণাটা আরও জোরাল হয়ে উঠল কিনা সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশ ভালো করলে হয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইমেজটা বিশ্ববাসীর কাছে আরও বেশি পরিষ্কার হয়ে যেত। ক্রিকেট বিশ্ব তখন বলতো, বাংলাদেশ সত্যি উঠে এসেছে। এই নতুন ইমেজটা তৈরি করতে পারলেন না বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। তবে দায়টা শুধুই ক্রিকেটারদের নয়, সে বিষয়টা ভুলে গেলে চলবে না। সামনে টি-টোয়েন্টি সিরিজ, সেখানে হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা প্লেয়ার ফাপ ডুপ্লেসি খেলছেন না। কিন্তু তারপরও দলটি দক্ষিণ আফ্রিকা।এই দলের বিপক্ষে যদি একটা জয় বাংলাদেশ নিয়ে আসতে পারে তাহলে অন্তত বলা যাবে একটা জয় নিয়ে বাংলাদেশ তাদের সফর শেষ করেছে। সেই আশা করাটাও কেন যেন খুব বেশি সাহস নিয়ে উচ্চারণ করা যায় না।
পরিচিতি: ক্রীড়া বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ : সাগর গনি
সম্পাদনা : আশিক রহমান ও খন্দকার আলমগীর হোসাইন